ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি গ্রেপ্তারে বড় ভাই পুলিশকে তথ্য দেওয়ায় প্রতিশোধ নিতে দুই বন্ধু মিলে কিশোর জাহিদুল ইসলামকে (১৬) নির্মমভাবে হত্যা করে পানিতে ফেলে দেয়। চাঞ্চল্যকর কিশোর জাহিদুল হত্যায় জড়িত তিন আসামিকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানায় পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) মো. ইকবাল হোছাইন সাংবাদিকদের কাছে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোছাইন জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের দক্ষিণ জাগৎসার গ্রামের এলাছ মিয়ার ৪ ছেলের মধ্যে জাহিদুলসহ তিন ছেলে চট্টগ্রামে বেকারিতে কাজ করেন। গত ১৭ রমজান ছুটিতে বাড়িতে আসে জাহিদুল। গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরদিন সকালে মাছিহাতা ইউনিয়নে একটি পুকুরে জাহিদুলের মরদেহ পাওয়া যায়। জাহিদুলকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। গলা, বুক ও পেটে ছুরিকাঘাত করে ভুঁড়ি বের করে ফেলা হয়। দুই হাতের কব্জির রগ ও গোপনাঙ্গ কেটে ফেলা হয়। দুই কানের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত কেটে ফেলা হয়েছে।
ইকবাল হোছাইন আরও জানান, ঘটনার পরপরই তদন্তে নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানা পুলিশ। প্রযুক্তির সহায়তায় দক্ষিণ জগৎসার গ্রামের মৃত আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে মোহাম্মদ হোসেনকে (৩৫) গ্রেফতার করে পুলিশ। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয় হোসেন। তার দেয়া জবানবন্দির ভিত্তিতে পলাতক একই গ্রামের নজরুল ইসলাম (৪৪) ও সিয়াম (১৫) নামের দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাদের বৃহস্পতিবার বিকেলে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান চলছে।
ঘটনার কারণ সম্পর্কে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, মূলত পূর্ব বিরোধকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড। প্রাথমিক অবস্থায় গ্রেপ্তাররা জানিয়েছে, জাহিদুলের পরিবারের সঙ্গে পূর্ব বিরোধ ছিল মোহাম্মদ হোসেনের। দীর্ঘদিন আগে একটি নারী নির্যাতন আইনের মামলায় মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছিল। মোহাম্মদ হোসেনকে পুলিশ খুঁজছিল। আসামি ধরতে জাহিদুল বড় ভাই পুলিশ সানাউলকে সহায়তা করেছিল। সে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিল মোহাম্মদ হোসেন। গত ২৪ এপ্রিল সন্ধ্যায় স্থানীয় কিশোর মো. সিয়ামকে দিয়ে কৌশলে সানাউলের ছোট ভাই জাহিদুলকে ডেকে আনেন মোহাম্মদ হোসেন। পরে তাকে সুলতানপুরের একটি পুকুরের পাড়ে নিয়ে মোহাম্মদ হোসেন ও তার বন্ধু নজরুল ইসলামসহ আরও দুইজন মিলে হত্যা করে পানিতে ফেলে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোজাম্মেল হোসেন, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল ইসলামসহ অন্যান্য পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।