মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-আজহা আগামী বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) উদযাপিত হবে। দিনাজপুরে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদ জামাতের জন্য প্রস্তুত ঐতিহাসিক গোর-এ শহীদ বড় ময়দান।
ঈদুল আজহার প্রধান জামাত শুরু হবে, সকাল সাড়ে ৮টায়। বৃহৎ এই ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন, মাওলানা শামসুল আলম কাশেমী। এবারও ৫ লাখ মানুষ জামাতে নামাজ আদায় করবেন বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
ঈদের জামাতে মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে এবারই প্রথম দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। 'ঈদগাহ স্পেশাল' ট্রেন দুটি চলাচল করবে ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-ঠাকুরগাঁও এবং পার্বতীপুর-দিনাজপুর-পার্বতীপুর রুটে।
এদিকে সৌন্দর্য বর্ধনের পাশাপাশি মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে নামাজ আদায়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে সব রকম প্রস্তুতি। সুষ্ঠুভাবে ঈদের জামাত সম্পন্ন করার জন্য নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সারা মাঠজুড়ে সিসি ক্যামেরাসহ নির্মাণ করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি বলেন, গোর-এ শহীদ ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। উপমহাদেশে এতো বড় ঈদগাহ আর নেই। আশা করছি, এবারও ৪ থেকে ৫ লাখ মানুষ জামাতে নামাজ আদায় করবেন। এবার ঈদের জামাতে পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মুসল্লিদের অংশগ্রহণের সুবিধার্থে দুটি স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জানা গেছে, স্পেশাল ট্রেনটি ঠাকুরগাঁও থেকে ছাড়বে ভোর ৫টায়, দিনাজপুর রেল স্টেশনে পৌঁছাবে সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে। আবার নামাজ শেষে দিনাজপুর থেকে ছাড়বে সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে আর ঠাকুরগাঁও পৌঁছাবে সকাল ১১টা ৩০ মিনিটে। মাঝে শিবগঞ্জ, পিরগঞ্জ, সেতাবগঞ্জ, মঙ্গলপুর, কাঞ্চন ষ্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।
এদিকে পার্বতীপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেন ছাড়বে সকাল ৭টায়, দিনাজপুর পৌঁছাবে সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে। আবার দিনাজপুর থেকে ছাড়বে সকাল ৯টা ১৫ মিনিটে এবং পার্বতীপুর পৌঁছাবে ১০ টায়। মাঝে মন্মথপুর, চিরির-বন্দর, কাউগাঁ স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর থেকেই গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। তবে বড় কোনো মিম্বর ছিল না। ২০১৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেন। এরপর ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয় নির্মাণকাজ। নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গম্বুজগুলোর দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফুট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এ ছাড়া ৫১৬ ফুট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এতো বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। এর আগে, ঈদগাহের মধ্যে দিনাজপুর স্টেশন ক্লাব থাকলেও এবার তা সরানো হয়েছে। ফলে বেড়েছে ঈদগাহ-এর আয়তন।
সিরামিক্স দিয়ে পুরো মিনার নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবার এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন, দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
দিনাজপুর সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, মুসল্লিদের জন্য ৩’শটি অজুখানা, ৪০টি টয়লেট ও খাবার পানি সরবরাহের জন্য পাঁচটি পয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
এদিকে ঈদগাহের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশ, বিজিবি ও র্যাবের সমন্বয়ে ঈদগাহ মাঠে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠে স্থাপন করা হয়েছে ৫০টি সিসি ক্যামেরা। এ ছাড়াও মাঠের মাঝখানে স্থাপন করা হয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ প্রশাসনসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা মাঠ প্রস্তুতির কাজ পরিদর্শন করেন।