ঢাকাশনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৬ বৈশাখ ১৪৩২

নামের মিল থাকায় ফিরোজের সাজা, দাবি পরিবারের

ঝালকাঠি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

শনিবার, ০৮ জুলাই ২০২৩ , ০৯:৪৩ পিএম


loading/img

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় এক নিরপরাধ ব্যক্তি ডাকাতি মামলায় ফরিদপুর কারাগারে সাজা খাটছেন বলে অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার। 

বিজ্ঞাপন

শনিবার (৮ জুলাই) ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীর স্ত্রী সুরাইয়া বেগম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তাদের তিন মেয়ে ফারিয়া আক্তার, তামিমা আক্তার, মরিয়ম আক্তার ও ভাতিজা শাহজালাল। 

কারাগারে থাকা ব্যক্তি হলেন, বৈশাখিয়া গ্রামের ফিরোজ আলম হাওলাদার (৪৬)। 

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে স্ত্রী সুরাইয়ার অভিযোগ, ২০০৭ সালে ফরিদপুরের একটি বাস ডাকাতি মামলার ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসল আসামির নাম ফিরোজাল ওরফে জুয়েল (৫০)। মামলায় আসামি হিসেবে তার নাম প্রথমে জুয়েল লেখা হয়। পরে অভিযোগপত্রে ফিরোজাল ওরফে জুয়েল লেখা হয়। সেখানে ফিরোজের বাবার নাম লেখা হয় মৃত নুর মোহাম্মদ ওরফে মুন্নুমিয়া। ঠিকানা দেওয়া হয় নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখিয়া গ্রাম। প্রকৃত আসামি ফিরোজাল ২০০৩ সালে ফরিদপুরের প্রথম যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারাধীন একটি মামলায় সাত মাস কারাভোগ করে জামিন নিয়ে পলাতক থাকে। ২০০৭ সালের ওই বাস ডাকাতির মামলায় পুলিশ তাকে আসামি করে। সেই মামলায় সে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি। 

সুরাইয়া বেগম জানান, গত ৮ মার্চ বরিশাল র‌্যাব-৮ এর মেজর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নেতৃত্বে জেলার নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের বৈশাখিয়া চৌমাথা বাজার থেকে ফিরোজ আলম হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে একই দিন রাতেই তাকে নলছিটি থানায় সোপর্দ করা হয়। 

ওই সময় র‌্যাব সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, ফিরোজ আলম ২০০৭ সালের মার্চ মাসে সংঘটিত ফরিদপুরের একটি বাস ডাকাতির মামলার আসামি। সেই মামলায় ২০১০ সালে ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েলকে (৫০) ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে সেই ডাকাতি মামলায় কারাগারে থাকা নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের নুর মোহাম্মদের ছেলে মো. ফিরোজ আলম হাওলাদার ১৯৯৭ সাল থেকে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজতুরী বাজারের আহসানুল্লাহ ইনস্টিটিউট অব টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন নামক একটি প্রতিষ্ঠানে অফিস সহায়কের চাকরি করেন। শবেবরাতের ছুটিতে বাড়িতে এলে ফিরোজ আলমকে র‌্যাব গ্রেপ্তারের পর ফিরোজাল ওরফে জুয়েল এলাকা থেকে গা-ঢাকা দিয়েছে। পরে ফিরোজ আলমের পক্ষের ফরিদপুরের আইনজীবী স্বপন সাহা গত ২৩ মে ফরিদপুর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ফিরোজ আলমের জাতীয় পরিচয়পত্র, চাকরির প্রতিষ্ঠানের হাজিরা খাতা ও প্রতিষ্ঠান প্রধানের প্রত্যায়নসহ ফরিদপুরের বিভিন্ন থানা ও আদালতের তলবির (কোনো মামলা নেই) মাধ্যমে প্রমাণ করার চেষ্টা করেন তিনি নির্দোষ। এই ফিরোজ আলম হাওলাদার ও ফিরোজাল ওরফে জুয়েল একই ব্যক্তি নয়। 

এদিকে আদালত তার আইনজীবীর আবেদন সন্তুষ্ট হয়ে গ্রহণ করেন। আদালত নির্দোষ ফিরোজ আলমকে পরোয়ানা না থাকা সত্ত্বেও কেন এ মামলায় আটক করা হলো তা সঠিক তদন্ত করে ৩০ মের মধ্যে নলছিটি থানার ওসিকে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

আদালত আদেশে আরও উল্লেখ করেন, কাগজপত্র পর্যালোচন করে দেখা যায় ফিরোজ আলম ফরিদপুরের কোনো মামলায় কখনো আসামি হননি কিংবা আটক বা গ্রেপ্তার হননি। তিনি কখনো জেল-জরিমানারও শিকার হননি। কিন্তু নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. আতাউর রহমান আদালতে প্রতিবেদন দিয়ে জানিয়েছেন, এ মামলায় আটক ফিরোজ আলমই আসল আসামি ফিরোজাল ওরফে জুয়েল। 

ফিরোজ আলমের স্ত্রী সুরাইয়া বেগম জানান, আমার স্বামী নির্দোষ। তার জাতীয় পরিচয়পত্র ও অন্যান্য প্রমাণাদি থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় সে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। আমার স্বামীকে মুক্তি দিয়ে আমাদের কলঙ্ক মুক্ত করা উচিত। 

এ বিষয়ে ফিরোজ আলমের আইনজীবী স্বপন সাহা জানান, তদন্তে নাম-ঠিকানা সঠিকভাবে যাচাই না হওয়ায় প্রকৃত আসামি আড়ালে থেকে গেছে। আমরা পুলিশের এ প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে আদালতে নারাজি করব। 

নলছিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহা. আতাউর রহমান জানান, গ্রেপ্তারকৃত ফিরোজ আলমই সাজাপ্রাপ্ত ফিরোজ আলম। আমাদের প্রতিবেদন আদালত যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |