বান্দরবানে সাঙ্গু নদী ভাঙনের কবলে পড়া প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার তাদের বসতবাড়ি নিয়ে হুমকির মুখে রয়েছে। নদী তীরবর্তী স্থানের বেশ কয়েকটি পরিবারের বসতবাড়ি ইতোমধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সাঙ্গু নদীর পানি অতিমাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকজনদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক।
টানা বর্ষণের ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে মাটি ধসে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও মাটি ধসে পড়ে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে। এতে সারাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হলেও বান্দরবান-রাঙ্গামাটি ও রুমা, রোয়াংছড়ি এবং থানচি উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বান্দরবান জেলা শহরের কিছু কিছু এলাকায় এখনও বিদ্যুৎ সংযোগ চালু হয়নি। জেলা শহর এলাকা ছাড়া রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় এখনও বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়, টানা ভারী বর্ষণে এবং পাহাড়ি ঢলে নদীর প্রবল স্রোতে সাঙ্গু নদীর তীরের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দেয়। এতে আমাদের বসতবাড়ি নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সরকারিভাবে যদি শহর রক্ষা বাঁধের ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে সাঙ্গু নদীর গর্ভে মিশে যাবে জেলা শহরের বেশ কিছু এলাকা। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।
বন্যায় পানি নেমে যাওয়ার পর বাড়ি-ঘরে বালু আর কাদামাটি জমে গেলে সেগুলো পরিষ্কার করতে হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে। যার কারণে এখনও অনেক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও উজানী পাড়া সাঙ্গু নদীর তীরে বসবাসরত পরিবারগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে মধ্যমপাড়া সাঙ্গু নদীর তীর এলাকায় বসবাসরত একটি দোতলা দালান ও বেশ কিছু কাচা ঘর নদীতে ধসে গেছে। ওই এলাকার কিছু জায়গা ও আরও কয়েকটি ঘর ধসে পড়তে পারে। তাই ঝুঁকি এড়াতে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বার বার বলা হচ্ছে।
প্রবল বর্ষণে পাহাড়ধসে রুমা-থানচি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বান্দরবান-থানচি সড়কের মিলনছড়ি থেকে চিম্বুক নীলগিরি পোড়া বাংলা এলাকায় গিয়ে পাহাড়ধসে সড়ক ভেঙে যাওয়ার এ চিত্র দেখা যায়। স্থানীয়রা জানান, টানা প্রবল বর্ষণে জেলার অধিকাংশ এলাকা বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। পাশাপাশি পাহাড়ধসে বান্দরবান-থানচি সড়কের মিলনছড়ি থেকে চিম্বুক নীলগিরি পোড়া বাংলা এলাকাসহ বান্দরবান-রুমা ও থানচি সড়কের বিভিন্ন এলাকার সড়ক ভেঙে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে বান্দরবান-রুমা ও থানচি সড়ক যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এই সড়ক মেরামত করতে বা যোগাযোগ উপযোগী করতে মাসেরও অধিক সময় লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা। টংকাবতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান পুকান ম্রো জানান, ভারী বর্ষণের কারণে এই রাস্তাটি পুরো ধসে গেছে। এই রাস্তা ধসে যাওয়ার কারণে কোনোদিকে সড়ক পথে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। এলাকাবাসী খুবই অসহায় অবস্থায় রয়েছে। তাই, রাস্তাটি দ্রুত মেরামত করে যান চলাচলের উপযোগী করে তোলার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।
বান্দরবান জেলা প্রশাসক শাহ মুজাহিদ উদ্দিন জানান, এই পর্যন্ত জেলায় বন্যায় ১৫ হাজার ৮০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত, ৩ হাজার ৫৭৮টি পরিবার আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ও ৮ হাজার ২৫৩ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। সম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া গেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য জানানো যাবে।