ঝিনাইদহ-২ আসনে নৌকার সমর্থকদের হামলায় আহত ও পঙ্গুত্ববরণকারীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল।
শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) ঝিনাইদহ পৌরসভা-সংলগ্ন ভাষা সৈনিক মুসা মিয়া আইসিটি অ্যান্ড ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় ঝিনাইদহ সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম হিরণ, জাহেদী ফাউন্ডেশনের বন্দে আলী বোরাক, আবু শাহরিয়ার জাহেদী পিপুল ও তবিবুর রহমান লাবুসহ নৌকার সমর্থকদের হামলায় আহত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহেদী মহুল বলেন, নির্বাচন ও রাজনীতি সমাজকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়। সে কারণে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু নির্বাচনে অংশ নিয়ে দেখলাম ঝিনাইদহ ও হরিণাকুন্ডুর বিভিন্ন গ্রামে ঈগল প্রতীকের সমর্থকরা প্রতিনিয়ত মার খাচ্ছে। তাদেরকে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে পঙ্গু করে দেওয়া হচ্ছে। আবার যারা ভিকটিম পুলিশ তাদের বিরুদ্ধেই মামলা নিচ্ছে।
প্রতিটি হামলা সুপরিকল্পিত বলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহুল অভিযোগ করেন।
তিনি ঝিনাইদহ সদর থানার ওসির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এই ওসি যদি এখানে থাকে তবে নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হবে না। সুরাট ইউনিয়নের ঘটনা প্রবাহ তুলে ধরে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহুল বলেন, জেলা পরিষদের সদস্য মেরাদিম মোস্তাকিম মুনির ওসি শাহিন উদ্দীনের সঙ্গেই মারামারি মিটিয়ে শহরে ফিরে আসেন। অথচ তাকেই আসামি করে মামলা করা হলো। সেই মামলা কীভাবে ওসি রেকর্ড করল, প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ওসি যদি তার আচরণ পরিবর্তন না করেন তবে পরবর্তী পরিস্থিতির জন্য তিনিই দায়ী থাকবেন। মহুল বলেন নির্বাচন আমার কাছে বড় ইস্যু নয়, কিন্তু ভোটের মাঠে মারামারির নামে যে দৃশ্য নতুন প্রজন্ম দেখছে তাতে তারা বড় হয়ে কি শিষ্টাচার শিখবে?
ভিডিও ক্লিপ প্রদর্শন করে মহুল বলেন, একজন মানুষ নিজের ঘরেও নিরাপদ নয়। সুরাট ইউনিয়নে ঘর থেকে ধরে এনে কোপানো হচ্ছে। এভাবে ঝিনাইদহ হরিণাকুন্ডু উপজেলায় প্রায় ৫০ জন ঈগল সমর্থককে মারধর করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১০-১৫ জন পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। ঢাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছেন ৭ জন। অথচ মার খেয়েও নৌকার পক্ষ থেকে তাদের নামেই মামলা করা হচ্ছে। সেই মামলা আবার পুলিশ নিচ্ছেও। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমরা কোন দেশে বসবাস করছি! দেশে কি কোন আইনকানুন নেই?
তিনি ঝিনাইদহ পুলিশ সুপারের প্রশংসা করে বলেন, সব কাজ যদি পুলিশ সুপারকে করতে হয়, তবে সদর থানার ওসির দায়িত্বটা কি? এরপরও যদি এমন হামলা মামলা চলতে থাকে তিনি রাজপথে নেমে প্রতিবাদ করবেন। তখন কিন্তু জনরোষ সামাল দিতে পারবেন না বলে সংবাদ সম্মেলনে হুঁশিয়ারি দেন এ প্রার্থী।
তিনি বলেন, ঝিনাইদহের উন্নয়নে তার পরিবার বহু আগে থেকে কাজ করছে। এমপি নির্বাচিত হলে আমি রেল লাইন, মেডিকেল কলেজ ও কৃষি ভার্সিটিসহ অবকাঠামো উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবো।
তিনি বলেন, আমার পরিবার মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করেছে বলে বিরোধীরা যে প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে তা মিথ্যা ও বানোয়াট।
তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় আমাদের বাড়ি লুটপাট হয়েছে। আমরা বাড়িছাড়া হয়েছি। ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে পোস্টারিং করায় আমি ১২ বছর বয়সে গ্রেপ্তার হয়েছি। আমার পিতা ভাসানীর অনুসারী হিসেবে রাজনীতি করেছেন। তিনি ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ও তার প্রয়াত পিতা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেছেন। তিনি বা তার পরিবার স্বাধীনতাবিরোধী হলে কীভাবে তাকে দলের সহসভাপতি মনোনীত করলেন?
সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলার শুড়োপাড়া গ্রামের মকছেদ আলীর স্ত্রী ঈগল প্রতীকের সমর্থক সামিনা বেগম, গান্নার আবুল হোসেনের ছেলে আলাউদ্দীন, বাজিতপুর গ্রামের খয়বর শেখের ছেলে নান্নু শেখ, আব্বাস আলী, কলমনখালী গ্রামের আব্দুল মান্নান বিশ্বাসের ছেলে আলমগীর হোসেন, রাজা বিশ্বাস ও ঘোড়ামারা গ্রামের শুকুর আলীসহ বিভিন্ন সময় নৌকার সমর্থকদের হামলায় আহত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।