টয়লেট থেকে ২ বছর পর উদ্ধার সুজিত
টয়লেট আটক মানসিক প্রতিবন্ধী সুজিত দাসকে (৩২) পুলিশ উদ্ধার করে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন। সুজিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর সদর ইউনিয়নের কাশিপাড়া গ্রামের মৃত হরেন্দ্র দাসের ছেলে। গত দুই বছর নিখোঁজ ছিলেন তিনি।
সম্প্রতি থানা থেকে ২শ’ গজ দূরে তাদের বাড়ির নোংরা টয়লেটে দরজার তালা ভেঙে উদ্ধার করেছেন নাসিরনগর থানার পুলিশ।
পরিবারের দাবি, মানসিক ভারসাম্যহীন সুজিত যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারেন, সে কারণে নিজেদের ও অন্যদের নিরাপত্তার স্বার্থে তাকে টয়লেটে আটকে রাখা হয়।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, জেলে পরিবারে জন্ম নেওয়া সুজিত নিয়মিত নদীতে মাছ ধরতেন। সেই মাছ বিক্রি করেই সংসার চালাতেন। এক সময় হঠাৎ সুজিত নিখোঁজ হয়ে যায়। এলাকায় দীর্ঘদিন সুজিতের দেখা মেলে না। বিষয়টি ঘিরে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। অনেকে ধারণা করেন, সুজিত হয়তো বেঁচে নেই। আবার কেউ কেউ বলতে থাকেন হয়তোবা কোনো কারণে সুজিত ভারতে চলে গেছেন।
সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলের দিকে নাসিরনগর থানায় খবর আসে, থানা থেকে মাত্র ২ শত গজ দূরে সুজিতদের বাড়ির একটি নোংরা অন্ধকার টয়লেটের ভেতরে গত দুই বছর ধরে তালা দিয়ে বন্দি করে রাখা হয়েছে সুজিতকে। টয়লেটের নিচের অংশে ছোট একটি ফাঁকা দিয়ে সুজিতকে মাঝে মধ্যে কিছু খাবার দেওয়া হয়। সুজিতও দিন-রাতে টয়লেটের ফ্লোরে থেকে ওই ফাঁকা দিয়ে বাহিরের দিকে চেয়ে থাকেন। মাঝে মধ্যে চিৎকার চেঁচামেচি করেন। আর এভাবেই ওই টয়লেটের ভেতরে কেটে গেছে সুজিতের দু’বছর।
পুলিশ ওই টয়লেটের তালা ভেঙে ভেতর করে সুজিতকে উদ্ধার করে হেফাজতে নিয়েছেন।
এ দিকে স্থানীয় অনেকেই বলছেন, গত পাঁচ বছর আগে সুজিত একটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। তখন থেকেই তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। তখন থেকেই পাগলের প্রলাপ বকা, ভাঙচুর ও সামনে যে মানুষকে পেতেন তাকেই মারধর করতেন।
আবার নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি বলেন, সম্পত্তির জন্যই সুজিতকে এভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
যদিও সুজিতের মা আরতি রাণী বলেন, সুজিতের মাথায় সমস্যা থাকায় যাকে দেখে তাকেই মারধর করতো সে। মানসিক ভারসাম্যহীন আমার ছেলে। একটি হত্যা মামলার আসামিও সে। নিজেদের ও অন্য লোকজনের নিরাপত্তার জন্য টয়লেটে আটকে রাখতে বাধ্য হয়েছি।
এ বিষয়ে সুজিতের ভাই অনিল দাস প্রশ্ন রেখে বলেন, সুজিত যদি কাউকে হত্যা করে এর দায়িত্ব কে নেবে।
নাসিরনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সোহাগ রানা বলেন, টয়লেট থেকে একটি মানুষের শব্দ কানে ভেসে আসছে—এমন সংবাদের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ওই বাড়িতে যায় পুলিশ। জানতে পারি, টয়লেটে সুজিত এক বছরেরও অধিক সময় ধরে বন্দি আছে। যুবককে উদ্ধার করে আপাতত চিকিৎসা করানো হচ্ছে। পরবর্তীতে পরিবার ও চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মন্তব্য করুন