ঢাকামঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘মৃত্যুর দুয়ারে বসে রাত-দিন কাটাতে হয়েছে’

আরটিভি নিউজ

বুধবার, ১৫ মে ২০২৪ , ০৫:৪৫ পিএম


loading/img
মা-বাবার সঙ্গে এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক নাজমুল হক (সংগৃহীত ছবি)

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি ২৩ নাবিক দেশে পৌঁছেছেন। এমভি আবদুল্লাহর এই ২৩ নাবিকের বিষয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল সারা দেশের মানুষ। ২৩ নাবিকদের বহন করা লাইটার জাহাজ মঙ্গলবার (১৪ মে) যখন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় তখন ছিল এক অভাবনীয় দৃশ্য। খুশিতে চোখের নোনা জল মুছেছেন নাবিকদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানরা।

বিজ্ঞাপন

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার চরনূরনগর গ্রামের আবু সামার ছেলে ও জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহর নাবিক নাজমুল হক হানিফ। বুধবার (১৫ মে) সকালে জানালেন নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

নাজমুল হক হানিফ বলেন, ‘জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার পর ভেবেছিলাম মা-বাবাসহ আত্মীয়-স্বজনদের মুখ আর কোনদিন দেখা হবে না। তখন নামাজ পড়তাম আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতাম, হে আল্লাহ তুমি আমাদের বাবা-মায়ের বুকে ফিরিয়ে দাও। এভাবেই মৃত্যুর দুয়ারে বসে রাত-দিন কাটাতে হয়েছে।’ 

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, এরপর ১৩ এপ্রিল ভোরে মুক্তিপণের বিনিময়ে জলদস্যুদের হাত থেকে আমাদের মুক্তি মেলে। আল্লাহ আমাদের ডাক শুনেছেন। তবে জলদস্যুরা জাহাজ ছেড়ে চলে গেলে মৃত্যুর ভয় কাটলেও তৎক্ষণিক মায়ের কোলে ফেরার কোনো উপায় ছিল না। তাই মুক্তির পর থেকে শুরু হয় মা-বাবার বুকে ফেরার অপেক্ষা। আজ মা-বাবা আমাকে বুকে ফিরে পেয়ে দারুণ খুশি। বারবার কৃতজ্ঞতা জানাই আল্লাহর দরবারে।

নাবিক নাজমুল বলেন, জিম্মিকালে প্রতিটি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যুর আতঙ্কে। বন্দুক হাতে টহল দিতো জলদস্যুরা। ৩৩ দিন যে কীভাবে কেটেছে, তা ব্যাখ্যা করতে পারব না। আজ এই আনন্দ প্রকাশের ভাষা ছিল না আমার। মা-বাবাকে কাছে পাব, এর চেয়ে আর বড় সুখ কী হতে পারে। এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম। আল্লাহ আমাদের কথা শুনেছেন।

ছেলে নাজমুলকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন আবু সামা ও নার্গিস খাতুন দম্পত্তি। তাকে কাছে পাওয়ার স্বস্তি রূপ নেয় আনন্দ-উচ্ছ্বাসে। ছেলের দুই গালে ভালোবাসার চুমুতে ভরিয়ে দেন তারা।

বিজ্ঞাপন

নাজমুলের বাবা আবু সামা বলেন, ‘সুস্থভাবে আমার ছেলেসহ ২৩ নাবিককে দেশে ফিরিয়ে আনায় বাংলাদেশ সরকার ও জাহাজ কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বুকের ধন বুকে ফিরলে কী যে আনন্দ হয় তা বলে বোঝানো যাবে না।’ 

বিজ্ঞাপন

ছেলেকে বুকে নিয়ে মা নার্গিস খাতুন বলেন, দিন-রাত ছেলের ছবি নিয়ে মোবাইলে কোনো সংবাদ এলো কি না এই চিন্তায় বসে থেকেছি। প্রতীক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছিল না। নাজমুল অপহৃতের পর থেকেই ওর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। আজ ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। এবার ঈদের দিন কীভাবে যে কেটেছে বলতে পারব না। ছেলে বাড়িতে ফিরে এসেছে, আমি ঈদের সকল কিছু আজ রান্না করব। ছেলেকে নিয়ে একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া করব।

প্রসঙ্গত, ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। এ হিসেবে আমিরাত থেকে ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছালো।

কেএসআরএম গ্রুপ জানায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৫৬ হাজার টন পণ্য চুনাপাথর রয়েছে। এতে প্রায় ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজটির ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতার পরিমাপ) বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১২ মিটার। জাহাজটির ড্রাফট বেশি থাকায় কুতুবদিয়ায় প্রথমে কিছু পরিমাণ পণ্য খালাস করে। এরপর পতেঙ্গার কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে বন্দর জলসীমায় আনা হয়। সেখানে বাকি পণ্য খালাস করা হবে। এ জন্য দেশে পৌঁছানোর পরও নাবিকদের ঘরে ফিরতে একটু সময় লেগেছে।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |