• ঢাকা শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬ পৌষ ১৪৩১
logo

‘দস্যুদের হাত থেকে ২১ জন পালিয়েছিলাম, তবে স্বেচ্ছায় ফিরে আসি’

আরটিভি নিউজ

  ১৫ মে ২০২৪, ১৯:১৮
ছবি : সংগৃহীত

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর সোমালিয়ান জলদস্যুদের জিম্মিদশা থেকে মুক্ত বাংলাদেশি ২৩ নাবিক দেশে পৌঁছেছেন। এমভি আবদুল্লাহর এই ২৩ নাবিকের বিষয়ে উৎকণ্ঠায় ছিল সারা দেশের মানুষ। ২৩ নাবিকদের বহন করা লাইটার জাহাজ মঙ্গলবার (১৪ মে) যখন চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় তখন ছিল এক অভাবনীয় দৃশ্য। খুশিতে চোখের নোনা জল মুছেছেন নাবিকদের মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তানরা।

সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৭ দিন পর বাড়ি ফিরেছেন ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের ছকরিকান্দি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে এবং জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর নাবিক তারেকুল ইসলাম। বুধবার (১৫ মে) সকাল ৬টায় বাড়ি ফিরে জানালেন নিজের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা।

তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘একবার আমরা সবাই জলদস্যুদের ফাঁকি দিয়ে পালানোর চেষ্টা করি। আমরা ২৩ জনের মধ্যে ২১ জন পালিয়েও গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন দেখতে পারলাম, জলদস্যুরা আমাদের দুই সদস্যকে ধরে ফেলেছে, তখন আমরা আবার স্বেচ্ছায় জলদস্যুদের কাছে ফিরে যাই।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গত ১৩ মার্চ সকাল ১০টার আগে একটি ফিশিং বোট দেখতে পাই। ওটা দেখে বোঝার উপায় ছিল না, ওটা ফিশিং বোট নাকি জলদস্যুদের বোট। তবে ওই বোট আমাদের জাহাজের চার নটিক্যাল মাইলের মধ্যে চলে এলে দ্রুতগতির একটি বোট নামায় সাগরে। এটা দেখে আমরা বুঝতে পারি, এটি জলদস্যুদের বোট। আমাদের জাহাজটি জলদস্যুদের লক্ষ্যবস্তু। তখন জাহাজে অ্যালার্ম বাজানো হয়। ওরা যাতে জাহাজে উঠতে না পারে, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু একসময় সব পদক্ষেপ ব্যর্থ হয়ে যায়। ওরা জাহাজে এসে প্রথমে গুলি ছুড়ে উল্লাস করতে শুরু করে। একসময় আমাদের জিম্মি করে ফেলে। তখন থেকে শুরু হয় আমাদের জিম্মিদশা।’

তিনি বলেন, ‘ওদের হাতে আমরা বন্দী। ওদের নির্দেশ আমাদের মানতে হয়। ওদের কথামতো, আমাদের জাহাজ চালাতে হয়। ওরা আমাদের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে গুলি লোড করে দাঁড়িয়ে থাকে। যেকোনো সময়, মিস ফায়ার থেকেও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’

তারেকুল বলেন, ‘ওই পরিস্থিতিতে কী হয়েছিল, আমাদের মনের অবস্থা, তা ভাষায় বর্ণনা দিতে পারব না। প্রতিটা মুহূর্তে মনে হয়েছে, এই হয়তো গুলি করে দেবে, সব শেষ হয়ে যাবে। তখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়েছি, পাশাপাশি এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর সাহায্য চেয়েছি। এভাবে দিন গড়াতে থাকে। একসময় ওদের কোস্টে আমাদের জাহাজ পৌঁছে যায়। ওদের এক অনুবাদক চলে আসেন। তিনি আমাদের কোম্পানির সিওর সঙ্গে কথা বলেন। আমাদের কোম্পানির সিও তাদের প্রস্তাবে দ্রুত সাড়া দেন। এতে ওরা খুশি হয়।’

নাবিক তারেকুল বলেন, ‘বন্দী থাকা অবস্থায় জলদস্যুরা আমাদের তেমন নির্যাতন করেনি। ওরা দু-একবার ধাক্কা–গুঁতা দিয়েছে। তবে তারা সব সময় আমাদের গুলির মুখে রাখত। এতে ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়েছে।’

তারেকুলের বাবা দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আজ ছেলেকে কাছে পেয়ে বুকের ভেতর চেপে বসে থাকা একটি পাথর যেন সরে গেল। এ জন্য জাহাজ কর্তৃপক্ষ, সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

তারেকুলের মা হাসিনা বেগম বলেন, ‘ছেলেটা জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। মনে হয়, আমার হারানো মানিক ফিরে এসেছে। এ আনন্দ বলে বোঝানোর নয়।’ হাসিনা বেগম আরও বলেন, ‘আমার মনের আকুতি আল্লাহ শুনেছে। যেকোনো কিছুর মূল্যে আমার ছেলেসহ সবাই যেন মুক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসে, সেই দোয়াই আল্লাহর কাছে করেছি।’

প্রসঙ্গত, ৩৩ দিনের মাথায় ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে জাহাজটি মুক্ত হয়। এরপর জাহাজটি প্রথমে আমিরাতের আল-হামরিয়া বন্দরে পৌঁছায়। সেখানে পণ্য খালাস শেষে আরেকটি বন্দর থেকে চুনাপাথর বোঝাই করে চট্টগ্রামের পথে রওনা হয়েছিল জাহাজটি। এ হিসেবে আমিরাত থেকে ১৩ দিনের মাথায় জাহাজটি বাংলাদেশের জলসীমায় এসে পৌঁছালো।

কেএসআরএম গ্রুপ জানায়, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে ৫৬ হাজার টন পণ্য চুনাপাথর রয়েছে। এতে প্রায় ১৯০ মিটার লম্বা জাহাজটির ড্রাফট (জাহাজের পানির নিচের অংশের গভীরতার পরিমাপ) বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১২ মিটার। জাহাজটির ড্রাফট বেশি থাকায় কুতুবদিয়ায় প্রথমে কিছু পরিমাণ পণ্য খালাস করে। এরপর পতেঙ্গার কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরে বন্দর জলসীমায় আনা হয়। সেখানে বাকি পণ্য খালাস করা হবে। এ জন্য দেশে পৌঁছানোর পরও নাবিকদের ঘরে ফিরতে একটু সময় লেগেছে।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল বাংলাদেশি জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
পাকিস্তানি চিনি, আলু নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে এল সেই জাহাজ 
সাংবাদিক ইলিয়াসের বিরুদ্ধে ঝাড়ু মিছিল
কুমিল্লা-ফরিদপুর বিভাগ করার সুপারিশ করবে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন
বিজয় দিবসে ফরিদপুরে সড়কে ঝরল ৩ প্রাণ