• ঢাকা শনিবার, ০৬ জুলাই ২০২৪, ২২ আষাঢ় ১৪৩১
logo

পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ কম, জ্বালানি খরচও উঠছে না জেলেদের

সাইফুল ইসলাম আকাশ, শরীয়তপুর প্রতিনিধি

  ২৪ জুন ২০২৪, ১৪:৫১
পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ কম, জ্বালানি খরচও উঠছে না জেলেদের
ছবি : আরটিভি

মৌসুম শুরু হলেও শরীয়তপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশের দেখা মিলছে না। জেলেরা দিনরাত নদীতে চষে বেড়ালেও জ্বালানি খরচ উঠছে না, ফলে দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। ইলিশের এই সংকটের ফলে স্থানীয় আড়তগুলোতেও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হওয়ার পথে।

ঈদুল আজহা পরবর্তী সময়ে জেলার জাজিরা উপজেলা, নড়িয়া উপজেলা, গোসারহাট উপজেলা ও ভেতরেগঞ্জ উপজেলার পদ্মা-মেঘনা উপকূলীয় জেলে পল্লী ও আড়তগুলোতে ঘুরে এবং জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ ও ২০২৪ সালে শরীয়তপুরের জাজিরা, নড়িয়া, ভেদরগঞ্জ, এবং গোসাইরহাট উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার জেলে পরিবার ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। চার উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রবাহমান রয়েছে পদ্মা ও মেঘনা নদী। এই এলাকার অন্তত ৮০ কিলোমিটার নৌ সীমানা থেকে আহরণ করা হয় ইলিশ মাছ। প্রায় ৩১ হাজার ২৪০ দরিদ্র জেলে পরিবার রয়েছে এখানে। এর বাইরেও আরও প্রায় ৯ হাজার জেলে আছেন। তারা ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বছরে দুটি সময় অর্থাৎ জাটকা এবং মা ইলিশ সংরক্ষণ সময়ে ২৫ হাজার ৮২৬ জন জেলে পরিবারকে মাসে ৪০ কেজি করে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া এসব জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন উপকরণ দেওয়া হচ্ছে। ইলিশ উৎপাদন কমে যাওয়ার পেছনে পানি দূষণ, অবৈধ জাল ব্যবহার, অতিরিক্ত মাছ ধরা এবং জলবায়ু পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য কারণ। নদীর নাব্যতা সংকট এবং ইলিশের খাদ্যের অভাবও মাছের সংখ্যায় প্রভাব ফেলছে।

সোমবার (২৪ জুন) সকালে এ বিষয়ে কথা হয় ভেদরগঞ্জ উপজেলার নরশিংহপুর আলুর বাজার ফেরি ঘাটের আড়তদার মকবুল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ইলিশের আমদানি না থাকায় অনেক আড়ত বন্ধ হয়ে গেছে। হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হবে তা সবার কল্পনার বাহিরে ছিল। জেলেদের জালে ইলিশ ধরা পড়ছে খুবই কম।’

নড়িয়া সুরেশ্বর ঘাটের মাছের আড়তদার শিহান খান বলেন, ‘ইলিশের আমদানি না থাকায় ৫ আড়তের ৩টি বন্ধ। সঠিকভাবে জাটকা সংরক্ষণ না হওয়ায় ইলিশ নদীতে কমেছে। আবার জেলেরা নদীতে নামলে জালের প্রকারভেদ নিয়ে নৌপুলিশের হয়রানি তো আছেই। ব্যবসার অবস্থা একদমই ভালো না।’

ভেদরগঞ্জ উপজেলার নরশিংহপুর আলুর বাজার ফেরি ঘাট এলাকার জেলে আবির হোসেন জানান, তার নৌকায় পাঁচজন জেলে মিলে দিনভর মাছ ধরেন। ছোট-বড় ৪টি ইলিশ বিক্রি করে পেয়েছেন ১৫০০ টাকা। এতে তাদের জ্বালানি খরচও ওঠে না।

এ সময় মোসলেম হোসেন নামে এক জেলে বলেন, ‘আগে দিনে ৫০-৬০ কেজি ইলিশ ধরতাম। এখন সেখানে ১০ কেজি ইলিশও পাওয়া মুশকিল।’

শরীয়তপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার বলেন, ‘আমরা বছরজুড়ে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করছি। বিশেষ করে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষায় আমরা জেলেদের সচেতন করে আসছি। এ বছর জাটকা সংরক্ষণ সফল হয়েছে। আগামী মৌসুমে এটির সুফল পাবে জেলেরা। তবে নদীতে চর জেগে ওঠা, নদীর পানি দূষণ ও ইলিশের খাদ্য হ্রাস পাওয়ায় মিঠা পানিতে ইলিশের বিচরণ কমেছে। তবে ভরা মৌসুমে ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’

এদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, শরীয়তপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ইলিশ সংকট শুধু জেলেদের জীবনযাত্রাকেই প্রভাবিত করছে না বরং স্থানীয় অর্থনীতিতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। সমন্বিত ও টেকসই উদ্যোগের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। যাতে ইলিশের ঐতিহ্যবাহী মৎস্য শিল্প পুনরুদ্ধার করা যায় এবং জেলেদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়।

মন্তব্য করুন

  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
হাতিয়ায় মসজিদের পুকুরে ধরা পড়ল ১০ ইলিশ
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীকে আম-ইলিশ পাঠালেন শেখ হাসিনা
ভরা মৌসুমেও পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ কম, দামও বেশি
মেঘনায় এক ইলিশের দাম ৯৩৫০ টাকা