কুড়িগ্রামে একের পর এক ভেঙে যাচ্ছে বাঁধ, ডুবছে নতুন এলাকা 

কুড়িগ্রাম (উত্তর) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪ , ১১:৪৮ পিএম


কুড়িগ্রামে একের পর এক বাঁধ ভেঙে ডুবছে নতুন এলাকা 
ছবি : আরটিভি

কুড়িগ্রামের দুধকুমার নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে ও সড়ক উপচে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ। দীর্ঘ হচ্ছে বানভাসিদের তালিকা। 

বিজ্ঞাপন

রোববার (৭ জুলাই) সকালে কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার আকরাম মাস্টারের বাড়ির সামনে ভেঙে গেছে এলজিইডির ক্ষুদ্র পানিসম্পদ প্রকৌশল বিভাগের নির্মিত একটি বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ। 

একইদিন ভোরে মুড়িয়ায় এক জায়গায় বাঁধ ভাঙার উপক্রম হলে এলাকাবাসী তা নিজ উদ্যোগে সংস্কার করেন। এ ছাড়া একই ইউনিয়নের তেলিয়ানীতে শনিবার একিট বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ে। কচাকাটা থেকে আয়নালের ঘাটগামী পাকা সড়ক উপচে পানি প্রবেশ করছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। অন্যদিকে রোববার বিকেলে ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরক মন্ডল এলাকার গ্রামীণ সড়কের ১০০ মিটার ভেঙে ৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

তেলিয়ানীর ওছমান গণি বলেন, অস্বাভাবিকভাবে দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বেলা ১১টার দিকে উপচে লোকালয়ে প্রবেশ করতে থাকে। ক্রমে বাড়তে থাকে এর গতি। ধীরে ধীরে মাটি ক্ষয়ে পানি প্রবেশের অংশ প্রশস্ত হয়ে যায়। সেখান দিয়ে পানি প্রবেশ করে কিছুক্ষণের মধ্যে তার উঠোন হাঁটুপানি হয়ে যায়। ক্রমে পানির উচ্চতা বাড়ছে। 

একই কথা বলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য আবেদ আলী। তিনি বলেন, বিকেলের মধ্যে তেলিয়ানীর অধিকাংশ ঘর-বাড়িতে পানি উঠে গেছে। একই অবস্থা যেসব এলাকায় বাঁধ ভেঙেছে তার আশেপাশের গ্রামগুলোর। 

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে কেদার ইউনিয়নের বাহের কেদার গ্রামের আকরাম মাস্টারের বাড়ি সংলগ্ন স্থানীয় সরকার বিভাগের ক্ষুদ্র পানি ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ১৫ মিটার জায়গা ভেগে হু হু করে পানি ঢুকতে থাকে তিনটি গ্রামে।

বিজ্ঞাপন

ফলে এ সমস্ত এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। টানা সাতদিন ব্যাপী স্থায়ী বন্যায় দুধকুমার, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্র নদী তীরবর্তী এলাকার হাজার হাজার বন্যা প্লাবিত মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। জেলার ৯টি উপজেলার দুটি পৌরসভাসহ প্রায় ৬০টি ইউনিয়নের দুলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। প্রাথমিকভাবে মানুষ যেসব উঁচু স্থানে গবাদিপশু রেখেছে, গত দুদিনে হু হু করে সেসব স্থানে পানি ওঠায় গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দি মানুষ। জীবন বাঁচাতে অনেকে নিজস্ব নৌকায়, উঁচু রাস্তায়, ফ্লাড শেল্টার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উঁচু ভূমিতে কিংবা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।

গত ৫ দিন ধরে নৌকায় স্ত্রী, ছেলে ও ২ নাতিকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়নের গুজিমারী গ্রামের শামসুল আলম। তিনি বলেন, ‘ঘরের আসবাবপত্র, চাল-ডাল, কাপড়-চোপড় ও মূল্যবান জিনিসপত্র যাতে হারিয়ে না যায় এজন্য নৌকায় আশ্রয় নিয়েছি। সারাদিন বৃষ্টির কারণে কিছু রান্নাবান্নাও করতে পারছি না। খুব সমস্যায় আছি।’

একই উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের চর বাগুয়ার মনসুর আলী বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কেউ খোঁজ-খবর নিতে আসে নাই। চুলা বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দুপুর গড়িয়ে গেলেও তবু পেটে কিছু পড়েনি।’

বামনডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রনি বলেন, ‘শনিবার মিয়াপাড়ায় বেড়িবাঁধের দুটি স্থানে ভেঙে যায়। রোববার তেলিয়ানীতে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। ফলে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে অনেক গ্রাম।’

নাগেশ্বরী উপজেলা প্রকৌশলী আসিফ ইকাবাল রাজিব বাঁধ ভাঙার বিষয়ে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে আমাদের কেউ জানাননি। বাঁধটি আমাদের কিনা খোঁজ-খবর নিয়ে জানাতে পারবো।’

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, ‘দুধকুমার নদীর তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ চলমান আছে। সেগুলো বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙার কোনো খবর তাদের কাছে নেই। শনিবার যেটি ভেঙেছে সেটি একটি পুরাতন সড়ক। তারপরেও সেটি রক্ষার্থে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। কোথাও কোনো সমস্যা থাকলে আমাদের নজরে দেওয়া হলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবো।’ 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission