আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এইচএসসির ছাত্র কারাগারে!

আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ০১ আগস্ট ২০২৪ , ০৮:২৯ এএম


আবু সাঈদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার এইচএসসির ছাত্র কারাগারে!
সংগৃহীত ছবি

কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিলে গিয়ে গ্রেপ্তার উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে (১৬) বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। 

বিজ্ঞাপন

বুধবার (৩১ জুলাই) আলফি শাহরিয়ার মাহিমের পরিবারের বরাত দিয়ে এ খবর জানা গেছে।

জানা গেছে, রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র আলফি শাহরিয়ার মাহিম (১৬)। বর্তমানে তিনি এখন রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

গত ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনের মিছিল রংপুর জিলা স্কুলের গেট থেকে বের হয়। ওই দিন মাহিম তার স্কুলে গিয়েছিল স্কুল ড্রেস পরেই বন্ধুদের সঙ্গে ওই মিছিলে মিশে যায়। এরপর থেকে তার কোনো খোঁজ পাচ্ছিলেন না পরিবারের লোকজন, অবশেষে হাসপাতাল, থানা পুলিশ সব জায়গায় গিয়ে তার কোনো খোঁজ মেলেনি। পুলিশ গত ১৮ জুলাই তাজহাট থানার সহিংস ঘটনার সময় আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে মডার্ন মোড় থেকে গ্রেপ্তার করে তাজহাট থানার ভেতর পেছনে হাত বেঁধে মেঝেতে বসিয়ে রাখে। যখন সেখানে হামলাকারীরা ব্যাপক সহিংসতায় থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে তখন পুলিশসহ তাকে পুলিশের গাড়িতে রংপুর কোতোয়ালি মেট্রোপলিটন থানায় নেওয়া হয়।

এদিকে ভুক্তভোগীর বোন সানজানা আখতার স্নেহা ফেসবুকে একটি পোস্ট দিলে এ নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়।

ফেসবুকে স্নেহা লেখেন, ‘গত ১৮ জুলাই তার ভাই কলেজের উদ্দেশে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সাথে মিছিলের মাঝে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের টিয়ার শেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। রাত ১০টা পর্যন্ত সব হসপিটাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না, তখন বাবার কাছে একটা কল আসে। তারা জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল (১৮ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু পরের দিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

স্নেহা ফেসবুকে আরও লেখেন, ‘আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে (আলফি) আবু সাঈদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বারবার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর; তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেয়া হলে ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কি রায় দিবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই। বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই।’

সানজানা আক্তার বলেছেন, ‘যে ছেলেটা লিগ্যাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু; তাকে তারা কোন হিসাবে এভাবে হ্যারাস (হয়রানি) করাচ্ছে? সব থেকে বড় কথা, তার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল। আইডি ছিল। সে পুলিশদের ইনস্টিটিউটেরই ছাত্র। এ ক্ষেত্রে কি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সহপাঠী, আইনজীবী কারও কিছুই করার নাই? আমার ভাইকে কোন লজিকে তারা আটকে রেখেছে, দেখাও করতে দিচ্ছে না!’

মাহিমকে যে মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে- তার তদন্তকারী কর্মকর্তা রংপুরের তাজহাট থানার এসআই জিল্লুর রহমান। তিনি এ বিষয়ে গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ওই দিন (১৭ জুলাই) আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন সে (মাহিম) পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবির টিম ছিল। ওই সময় সে (মাহিম) বিজিবির হাতে ধরা পড়ে।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘ঘটনার দিন তো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে আলফি আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু পরের দিনেও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মানে তার সম্পর্কে এত যাচাই করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু আইন অনুযায়ী তো তাকে ২৪ ঘণ্টার বেশি আমরা রাখতেও পারি না। এ কারণে তাড়াহুড়ো করে তাকে চালান দেওয়া হয়। যাই হোক বুধবার তার বাবা-মাকে পুলিশ কমিশনার স্যার ডেকে আশ্বস্ত করলেন, তার বয়স কম। সম্ভবত বৃহস্পতিবার তার জামিন হবে। তাকে চার্জশিট থেকেও অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলেছেন স্যার।’

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission