নওগাঁয় ২ সাংবাদিককে তুলে নিয়ে নির্যাতন
নওগাঁর পত্নীতলায় অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকে ও ভুল চিকিৎসার সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ২ সাংবাদিক নির্যাতনকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) নির্যাতিত দুই সাংবাদিক জানিয়েছেন, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের মালিক, চিকিৎসক ও তাদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে সাংবাদিকতা না করার প্রতিশ্রুতি লিখে নিয়েছেন। এ ছাড়া জোর করে গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেছে।
জানা যায়, অপমান সইতে না পেরে নির্যাতনের শিকার দৈনিক জয়পুরহাট বার্তার প্রতিনিধি মাহমুদুন নবী বাড়িতে যাননি। তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। অপর জন দৈনিক মানবকণ্ঠের প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম নিজ বাড়িতেই আছেন। শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে তাদেরকে তুলে নিয়ে গিয়ে পত্নীতলা সিটি ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়।
ঘটনার শিকার মাহমুদুন নবী বলেন, শনিবার বিকেলে আমি নজিপুর বাজারে সিটি ক্লিনিকের সামনে একটি স্টলে চা পান করছিলাম। এ সময় সিটি ক্লিনিকের চিকিৎসক ও মহাদেবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার দেওয়ান সবুর হোসেন আমাকে জোর করে ক্লিনিকের ভেতরে ধরে নিয়ে যান এবং অতর্কিত মারপিট শুরু করেন। ঘরে আটকে রেখে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে কয়েক দফায় আমাকে মারধর করা হয়।
একপর্যায়ে সন্ত্রাসী কায়দায় মেরে ফেলার হুমকির মুখে সাংবাদিকতা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাহমুদুন নবীর কাছ থেকে একটি সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নেন তারা। এ ছাড়া ফেসবুকে লাইভে সাংবাদিকতা না করার ঘোষণা এবং গলায় জুতার মালা ঝুলিয়ে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
মাহমুদুন নবী আরও বলেন, অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টক ও ভুল চিকিৎসার সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ক্লিনিক মালিক ও ডাক্তাররা চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ তুলে নির্যাতন করেছে। এখন মামলা না করার হুমকি দিচ্ছে।
এ ঘটনার সুষ্ঠ বিচার চান ভুক্তভোগীরা।
এদিকে একই দিন রাত ১০টার দিকে মানবকন্ঠের প্রতিনিধি রবিউল ইসলামকে বাড়ির সামনে থেকে মোটরসাইকেলে করে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সিটি ক্লিনিকে। সেখানে একটি ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।
রবিউল বলেন, নির্যাতনের পর জোর করে আমাকেও সরকারি রাজস্ব স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে ক্লিনিক মালিকদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।
এ ঘটনায় চিকিৎসক ও ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক মালিক পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছে। সিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশিদ জানান, চিকিৎসকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের দ্বন্দ্ব হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কেউ জড়িত নয় দাবি করেন তিনি। চিকিৎসক দেওয়ান সবুর হোসেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, ক্লিনিক ডায়াগনস্টিকের মালিকপক্ষের লোকজন সাংবাদিকদের মারধর করেছে।
এ বিষয়ে পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, খবর পেয়ে সাংবাদিক মাহমুদুন নবী ও রবিউল ইসলামকে উদ্ধার করে আনা হয়েছিলো। তবে তারা এখনও কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মন্তব্য করুন