১০০ টাকায় কি কাল হলো মোস্তাফিজুরের!
জীবিত ফিরে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছেন গত বুধবার থেকে। এখন শুধু মরদেহ পাওয়ার আশায় আছেন পরিবারসহ গ্রামবাসী। তাই মা-বাবা তার ছেলে আর বোন তার ভাইয়ের মরদেহ পাওয়ার আশায় দিনরাত বিলাপ করছেন। তাদের কান্নায় গ্রামবাসী কাঁদছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় করছেন লোকজন। পাশের গ্রাম থেকে শত শত নারী পুরুষ দেখতে আসছেন সেই জায়গা। সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন, কেউ আবার আড়ালে চোখের পানি ফেলছেন। তবে সবার চাওয়া সর্বোচ্চ শাস্তি।
বলছি গত ৮দিন আগে নিখোঁজ হওয়া মোস্তাফিজুর রহমান (১৭) নামের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর কথা। কৃষক বাবা আনোয়ার হোসেন ও মা মোসলেমা দম্পত্তির একমাত্র ছেলে মোস্তাফিজুর রহমানের বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার মসরইল (শংকরপুর) গ্রামে। তিনি মধইল বিএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় গণিত বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছেন। তার ঘরে এখন ঝুলছে আইডি কার্ড, ফাঁকা পড়ে আছে শোবার ঘর।
গত বুধবার ১৩ নভেম্বর বিকেলে গ্রামের লোকজন একটি ধান খেতের গর্ত থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাতের হাড় ও নাড়িভুঁড়ি দেখতে পান। গর্তে পাওয়া যায় অর্ধগলিত শরীরের কিছু অংশ। পুলিশ খবর পেয়ে সেগুলো উদ্ধার করে। পাশে পড়ে থাকা শার্ট ও লুঙ্গি দেখে পরিবারের সদস্যরা সেগুলো মোস্তাফিজুরের বলে দাবি করে। এরপর শুরু হয় নানা জল্পনা কল্পনা। বৃহস্পতিবার আবারও ধানখেতের আরেক জায়গা থেকে মাথার চামড়াসহ কিছু চুল, নক, হাড় ও কলিজা উদ্ধার করে। তবে এখনও পুরো মরদেহ ও মাথা পাওয়া যায়নি।
মসজিদের ইমামসহ এলাকাবাসী বলছে, মোস্তাফিজুর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। সেদিনও মাগরিবের নামাজ পড়তে স্থানীয় মসজিদে যান তিনি। কিন্তু এশার নামাজ থেকে আর তাকে দেখা যায়নি তাকে। বাড়িতে ফিরে না আসায় তার পরিবারের লোকজন মসজিদসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজখবর করতে থাকেন। কোথাও খুঁজে না পাওয়ায় তারা হতাশ হয়ে পড়েন। সবাই মনে করেছিলো জ্বীনে নিয়ে গেছে। কিন্তু এই দুদিনে ধানখেতের ভেতরে লাশের এমন অংশ দেখে সবাই বুঝতে পারেন তাকে খুন করা হয়েছে। এলাকায় ভালো আচরণের জন্য মোস্তাফিজের সুনাম ছিলো বলে তারা জানিয়েছেন।
মা মোসলেমা ও বোন জিন্নাতুনের মুখে শুধুই আর্তনাদ। তারা জানালেন, আমরা এমন হতভাগা মোস্তাফিজুরের মরদেহটা এখনও পেলাম না। শুধু হাতের হাড়, নাড়িভুঁড়ি, কলিজা পাওয়া গেছে।
ছেলেকে শেষ বার মাগরিবের নামাজ পরার কথা বলেছেন মা। সেই ছেলেকে আর দেখা হয়নি তার। এমন নৃশংসভাবে হত্যা যারা করেছে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি করেছে পরিবারটি। এমন করে আর্তনাদ করছে মা ও বোন।
নিহতের বাবা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলের কোনো শত্রু ছিলনা। তবে তার বন্ধু নাইমকে একশ টাকা ধার দিয়েছিল। সেই টাকা ফেরত চাওয়ার ঘটনা আমি জানতাম। গত বুধবার দেওয়ার কথা ছিল। তাহলে কি ১০০ টাকায় তার ছেলের জীবনের জন্য কাল হলো এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। এ ঘটনায় নাইমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে আশা হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি।’
গত বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অনেক নারী-পুরুষের উপস্থিতি। তদন্তের কাজে এসেছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মহাদেবপুর সার্কেল) জয়ব্রত পাল ও পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ মো. এনায়েতুর রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা।
জয়ব্রত পাল বলেন, দুদিনে ওই মাঠ থেকে শরীরের কিছু অংশ পাওয়া গেছে। গত ৬ নভেম্বর মোস্তাফিজুর রহমান নামে যে ছেলেটা নিখোঁজ হয়েছিল, পাশে পড়ে থাকা কাপড় দেখে পরিবারের লোকজন মোস্তাফিজুরের বলে দাবি করেছে। একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, তদন্তের যে ধাপগুলো আছে আমরা সবগুলোই অবলম্বন করে জড়িতদের গ্রেপ্তার করবো। তার পরিবারের মতো আমরাও চাইবো অন্যায়কারীর বিচার হোক।
এ দিকে ধানখেতের পাশে বসবাসরতরা কেউ মুখ খুলতে রাজি না। ওই ধানখেতের পাশের পাড়ায় নাইমদের বাড়ি। সেখানে অনেক নারী-পুরুষ উপস্থিত থাকলেও কেউ মুখ খুলতে চাননি।
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন