ব্যবসায়ীকে ৭ টুকরো, জবানবন্দিতে যা জানালেন প্রেমিকা
হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন মাসুম হত্যার মূলহোতা রুমা আক্তার ও তার বান্ধবী রোকসানা ওরফে রুকু।
শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. হায়দার আলীর আদালতে জবানবন্দি দেন ময়মনসিংহের গৌরিপুর থানার তাতরাকান্দা গ্রামের নজর আলীর মেয়ে রুমা আক্তার ও তার বান্ধবী ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া থানার কানিকশালগাঁও গ্রামের মৃত আবদুল হকের মেয়ে রোকসানা ওরফে রুকু।
নারায়ণগঞ্জ কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) কাইউম খান আদালতে আসামিদের স্বীকারোক্তি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আদালতকে রুমা বলেন, ‘ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন আমাকে বিয়ে করবেন বলে সম্পর্ক তৈরি করেন। এরপর কাফরুলের শেওড়াপাড়া এলাকার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে আমাকে রাখেন। মাসে মাসে তাকে নির্দিষ্ট অংকের টাকা দিতেন জসিম। কিন্তু কিছুদিন ধরে আমি জানতে পারি, জসিম অন্য এক নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। আমাকেকে বিয়ে না করা এবং অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোয় আমার মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। ক্ষোভ থেকেই জসিম উদ্দিনকে হত্যার পরিকল্পনা করি। হত্যার পর মরদেহ গুম করতে আমাকে আমার বান্ধবী রোকসানা রুকু সহায়তা করেন।’
রুকু তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘জসিমের সঙ্গে রুমার সম্পর্কের বিষয়টি আমি জানতাম। জসিমকে হত্যার পর বিষয়টি রুমা আমাকে জানিয়ে মরদেহ গুমের জন্য সহায়তা কামনা করেন। তখন আমি মরদেহ গুমে তাকে সহায়তা করি।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রোকনুজ্জামান বলেন, ‘আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আরও অনেক কিছু জানার বাকি রয়েছে।’
এর আগে, গত ১৩ নভেম্বর সকালে রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন-কুড়িল বিশ্বরোড সড়কের উত্তর পাশে ৫ নম্বর সেক্টরের ব্রাক্ষণখালী এলাকায় লেকের পাড় থেকে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় অজ্ঞাত যুবকের লাশের সাত টুকরো উদ্ধার করে পুলিশ। তিনটি কালো পলিথিনের ব্যাগে করে অজ্ঞাত যুবকের মাথা, দুই হাত, শরীরের পেছনের অংশ, নাড়িভুঁড়ি, বাঁ পা, বাঁ উরুর কাটা অংশ উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) প্রত্যুষ কুমার মজুমদার নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রূপগঞ্জের পূর্বাচলে জসিম উদ্দিন মাসুমের (৬২) সাত টুকরো লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে লাশের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে লাশের পরিচয় জানতে পারি। হত্যাকাণ্ডের ভুক্তভোগী হলেন ফতুল্লার চাঁদ ডাইংয়ের মালিক শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুম। তিনি বিবাহিত এবং সন্তান রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ঘটনায় পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে এই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি রুমা আক্তারকে (২৮) রাজধানীর কাফরুল শেওড়াপাড়া এলাকার ভাড়া বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। পরে আসামিকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে তার দেখানো স্থান থেকে একটি চাপাতি, হেসকো ব্লেড ও ভুক্তভোগীর পরিহিত সাফারি, এক জোড়া জুতা উদ্ধার করা হয়।’
প্রত্যুষ কুমার মজুমদার বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামি জানান, প্রেমের সম্পর্কের জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। রুমার সঙ্গে শিল্পপতি মাসুমের সম্পর্ক রয়েছে। এর পাশাপাশি মাসুম অন্য আরেক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। বিষয়টি জানতে পেরে, রাগে-ক্ষোভে ও আবেগের বশবর্তী হয়ে তাকে খুন করে। গত ১০ নভেম্বর রাতে রাজধানীর শেওড়াপাড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। মূলত সেখানে একটি ভাড়া বাড়িতে তারা একত্রিত হতেন। প্রথমে তাকে দুধের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করা হয়। এরপর চাপাতি দিয়ে জবাই করে লাশ টুকরো টুকরো করা হয়। সেই টুকরো অংশ প্রথমে পাঠাও ও পরে সিএনজি ভাড়া করে বিভিন্ন স্থানে ফেলেছে। গ্রেপ্তার রুমা ময়মনসিংহ গৌরিপুর থানার তারাকান্দা এলাকার নজর আলীর মেয়ে।’
আরটিভি/এসএপি/এআর
মন্তব্য করুন