সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এসিল্যান্ডকে সাপ্তাহিক চাঁদা না দেওয়ায় দুই ট্রাক ও এক এক্সভেটর চালককে আটক করার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ সময় ট্রাক শ্রমিকদের তোপের মুখে আটককৃত চালকদের ছাড়তে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের মল্লিকপুরের নতুন বাসস্টেশন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ট্রাক শ্রমিকরা জানান, নদীতে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় ট্রাকচালক ও শ্রমিকরা মাটি পরিবহন করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ জন্য এসিল্যান্ডের নামে তার অফিসের নাজির কাম ক্যাশিয়ার মুরাদ মিয়া প্রতি মাসে ১০ লাখ টাকা হিসেবে সপ্তাহে আড়াই লাখ টাকা চাঁদা নেন। এ সপ্তাহের চাঁদা না দেওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে নাজির মুরাদ মিয়া এসিল্যান্ডকে সঙ্গে নিয়ে একজন ট্রাক ও একজন এক্সভেটর চালককে আটক করেন।
এ সময় খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ ট্রাক শ্রমিকরা সুনামগঞ্জ-সিলেট মহাসড়কে আড়াআড়ি ট্রাক রেখে যানচলাচল বন্ধ করে দেন। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং শ্রমিকদের চাপের মুখে আটককৃত চালকদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ সময় শ্রমিকরা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও স্থানীয় গণমাধ্যকর্মীদের উপস্থিতিতে নাজির মুরাদ মিয়ার বিরুদ্ধে চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ করেন। তবে নিজের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করেছেন, অভিযুক্ত নাজির মুরাদ মিয়া।
সুনামগঞ্জ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল জাহান বলেন, আমরা নিরীহ শ্রমিক। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এসিল্যান্ডের জ্বালা সহ্য করছি। পরে নাজিরের মাধ্যমে আমরা কনট্রাকে আসছি প্রতি সপ্তাহে আড়াই লাখ টাকা করে মাসে ১০ লাখ টাকা দেব। এই সপ্তাহে টাকা না দেওয়ায় আমাদের শ্রমিকদের ধরে নিতে চাইছিল। সব শ্রমিক আন্দোলনে নামলে বাধ্য হয়ে ছেড়ে দেয়।
সুনামগঞ্জ জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নুর উদ্দিন বলেন, আমাদের শ্রমিকরা লেখাপড়া করেনি, তবে তারা কোন অপরাধ করেনি। তারা ঠিকাদারের মাটি পরিবহন করতে ভাড়ায় কাজ করছেন।
শ্রমিকরা জানিয়েছেন, এসিল্যান্ডকে সাপ্তাহিক চাঁদা না দেওয়ায় দুইজন শ্রমিককে আটক করে নিতে চেয়েছিলেন। খবর পেয়ে আমরা এসিল্যন্ডের কাছে জানতে চাইলে তিনি আমাদের কোন কথাই শুনতে রাজী হননি এবং শ্রমিকদের নিয়ে যেতে চাইছিলেন। তখন শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে শ্রমিকদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইসমাইল রহমানকে কয়েক বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের তিনি বলেছেন, তিনি কোনোও চাঁদা নেননি। তার কার্যালয়ের কেউ যদি শ্রমিকদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে থাকে এবং অফিসে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) পরে রাত ৯টায় আরটিভিকে জানান, ট্রাক শ্রমিকদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। অনুমোদন ছাড়া এক্সকেভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাক লোড করার সময় আসামি ২ জনকে হাতে নাতে আটক করা হয়। পরে রাস্তা অবরোধ করে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে অন্যান্য ট্রাকের ড্রাইভাররা আটককৃত দুই জনকে নিয়ে যায়। যার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
আরটিভি/এএএ