টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহীগামী চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত ৩ ডাকাতের মধ্যে সবুজ ও শরীফুজ্জামান শরীফ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নওরীন করিম তাদের জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। একই আদালতে গ্রেপ্তার হওয়া মুহিতকে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন মঞ্জুর করা হয়েছে।
জবানবন্দি প্রদানকারীরা হলেন, শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামের ইসমাইল মোল্লার ছেলে মো. সবুজ এবং ঢাকার সাভারের টান গেন্ডা এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে শরীফুজ্জামান ওরফে শরীফ আর রিমান্ডে পাঠানো ব্যক্তির নাম শহীদুল ইসলাম মুহিত। তিনি মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার লাউতারা গ্রামের বদর উদ্দিন শেখের ছেলে। শনিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তারের পর শনিবার দুপুরে ৩ ডাকাত সদস্যকে টাঙ্গাইল আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ। এর মধ্যে সবুজ ও শরীফুজ্জামান আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার জন্য রাজি হয়। শহিদুল জবানবন্দি না দেওয়ায় পুলিশ ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নওরীন করিম শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে সন্ধ্যায় অন্য দুইজনের জবানবন্দি আদালতের বিচারক লিপিবদ্ধ করেন।
এর আগে, শুক্রবার রাতে টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সাভারের বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানায় একটি ও ঢাকা জেলার সাভার মডেল থানায় একটি বাস ডাকাতি মামলাসহ মোট ৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনই আন্তঃজেলার ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে, এ ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার কারণে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানার ডিউটি অফিসার (এএসআই) আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে আতিকুজ্জামানকে সাময়িক বরখাস্ত করে টাঙ্গাইল পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করা হয়।
এর আগে, ঘটনার তিনদিন পর শুক্রবার ভোরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় ওমর আলী নামের এক যাত্রী বাদি হয়ে অজ্ঞাত ৮/৯ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি দিনগত মধ্যরাতে ইউনিক রোড রয়েলসের বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকার গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাসটিতে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কয়েকজনকে রক্তাক্ত করে ডাকাতি শুরু করে। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বাসটিকে বিভিন্ন স্থান ঘুরিয়ে ডাকাতি ও নারীর শ্লীলতাহানি করার পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের নির্জন স্থানে বাস থামিয়ে ডাকাতদল নেমে যায়।
ডাকাতরা বাস থেকে নেমে যাওয়ার পর চালক বাসটি নিয়ে গন্তব্যে যেতে অস্বীকৃতি জানান। পরে যাত্রীদের চাপের মুখে চালক বাস নিয়ে পুনরায় যাত্রা শুরু করেন। পরে মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার পর যাত্রীরা বাসটি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানায় নিয়ে যান। এ সময় ডাকাতিতে জড়িত সন্দেহে বাসের চালক বাবলু আলী (৩০), সুপারভাইজার সুমন ইসলাম (৩৩) ও হেলপার মাহবুব আলমকে (২৮) আটক করে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে নাটোর আদালতে পাঠায় বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ। পরে তারা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান। বুধবার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসে।
আরটিভি/কেএইচ-টি