ঢাকামঙ্গলবার, ২৫ মার্চ ২০২৫, ১১ চৈত্র ১৪৩১

টাঙ্গাইলে শাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতিরা

কামাল হোসেন

রোববার, ২৩ মার্চ ২০২৫ , ০৮:১৬ এএম


সপ্তাহ খানেক পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের ব্যস্ততা বেড়েছে তাঁতপল্লীতে। শ্রমিকরা ভোর থেকে রাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন শাড়ি। সব মিলিয়ে চিরচেনা রূপে ফিরেছে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লীগুলো। ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবার ঈদেও টাঙ্গাইল শাড়ীতে এসেছে বাহারি ডিজাইন আর নতুনত্ব। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও মেতেছেন কর্মযজ্ঞে।

বিজ্ঞাপন

নারীদের উৎসবের পোশাক মানেই শাড়ি। যেকোনো অনুষ্ঠানেই আবহমান বাঙ্গালী নারীর প্রথম পছন্দ শাড়ি। এর মধ্যে আবার তাদের টাঙ্গাইল তাঁতের শাড়ির প্রতি রয়েছে আলাদা টান। তাই ঐতিহ্য ধরে রাখতে এবার ঈদেও টাঙ্গাইল শাড়িতে এসেছে বাহারি ডিজাইন আর নতুনত্ব। পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেও তৈরি করা হচ্ছে শাড়ি।

জানা যায়, তাঁতের রাজধানী টাঙ্গাইলের পাথরাইল ছাড়াও বাজিতপুর, এলাসিন, করটিয়া, বল্লা, এনায়েতপুর, পোড়াবাড়ি, চারাবাড়ি, বাঘিলসহ সকল তাঁত-পল্লীগুলোতে তাঁতের খটখট শব্দে মুখরিত।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল তাঁত পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও কাজ করছেন। কেউ সুতা ছিটায় উঠানোর কাজে, কেউ সুতা পাড়ি করার কাজে, আবার কেউ সুতা নাটাইয়ে উঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। তবে আগের তুলনায় কমেছে তাঁত ঘরের ঘরের সংখ্যা।

ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, সর্বনিম্ন ৫০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকা পর্যন্ত শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। পাওয়ার লুমের কারণে হ্যান্ডলুমের তৈরি শাড়ি কম চলে। এদিকে হ্যান্ডলুমের শাড়ির দামও বেশি। তারপরও আশা করছি এবার ঈদ ও পহেলা বৈশাখ পাশাপাশি হওয়ায় এবার তাদের বিক্রি ভালো হবে।
 
তাঁত শ্রমিকরা বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আগে সপ্তাহে ৩ টি শাড়ির তৈরি করতে পারতাম। কিন্ত এখন সপ্তাহে ৪টি শাড়ি তৈরি করছি। ব্যস্ততা বাড়লেও বর্তমানে আমাদের মজুরি কম। কম মজুরি দিয়ে আমাদের সংসার চলা দূরহ হয়ে উঠেছে। আগের মতো জমজমাট নেই তাঁতপল্লী। তবুও বাব দাদার পেশা ধরে রেখেছি আমরা।

তাঁত শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমাদের ব্যস্ততা বেড়েছে। আমি জামদানি শাড়ি তৈরি করছি। সপ্তাহে ৩টি শাড়ি তৈরি করতে পারি। এতে মজুরি পাওয়া যায় ২২০০ থেকে ২৩০০ টাকা। আগের মতো এ পেশায় লাভ পাওয়া যায়। বিশেষ করে বর্তমানে বাজারে সূতার দাম বেশি।
 
তিনি আরও বলেন, তবে এখনো পুরোপুরি তাঁতের বাজার জমে উঠেনি। আমি ১৫ বছর ধরে এ পেশায় কাজ করছি।
 
আরেক তাঁত শ্রমিক আব্দুল জলিল বলেন, আমি ২৩ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। বাব দাদার পেশা হিসেবে রয়েছি। ঈদ উপলক্ষে বালুচুরি শাড়ি তৈরি করছি। প্রতি পিস শাড়িতে ৬০০ টাকা মজুরি দেওয়া হয়। সপ্তাহে ৫টি শাড়ি তৈরি করছি এখন। এতে আমাদের খাওয়া খরচ দিয়ে পুষে না। ঈদের দুই তিন মাস আগে আমাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়।
 
আয়নাল নামের এক তাঁত শ্রমিক আপেক্ষ করে বলেন, আমি ৩০ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। আগের খাওয়ার সময় পাওয়া যেতো না। এ এলাকায় বিগত সময়ে ২ হাজার তাঁত ছিল, কিন্ত এখন ২০০ টাও তাঁত নেই। মজুরি কম থাকায়, নতুন করে কেউ কাজে আসতে চায় না।
 
তিনি আরও বলেন, ধান কাটতে একদিন মজুরি পাওযা যায় ৮০০ টাকা। কিন্ত দুইদিন সময় লাগে একটি তাঁতের বানতে। তবুও ধান কাটার শ্রমিকের সমান মজুরি পাওয়া যায় না। আমাদের মজুরি বাড়ানো হলে পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারব।

বিজ্ঞাপন

এদিকে দেশের নানা প্রান্ত থেকে দলে দলে ক্রেতারা শাড়ি কিনতে ভীড় করছেন টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী ও জেলা শহরের শোরুমগুলোতে। স্বাচ্ছন্দ্যে নিজের জন্য এবং প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার জন্য পছন্দের শাড়ি কিনছেন ক্রেতারা।

টাঙ্গাইল শহর থেকে আসা মো. সোহেল নামের এক ক্রেতা বলেন, ঈদ উপলক্ষে পরিবারের জন্য শাড়ি কিনতে এসেছি। আগের থেকে কিছুটা দাম বেশি। তবুও টাঙ্গাইল শাড়ির মান ভালো থাকায় চাহিদা বেশি।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল জেলা শাড়ি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি রঘুনাথ বসাক বলেন, ঈদকে কেন্দ্র করে এবার নতুন ডিজাইনের শাড়ি তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আবহাওয়া উপযোগী অনুযায়ী ‘ভেজিটেবল ডাই’ নামের নতুন শাড়ি তৈরি করা হয়েছে। রোজার ঈদ এবং পহেলা বৈশাখ কাছাকাছি হওয়ায় আশবাদি বিপুল পরিমাণের শাড়ি বিক্রি হবে।
 
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশীয় বাজার অনেক ছোট হয়ে আসছে। আমরা বিদেশীর বাজারের প্রতি বেশি ঝুঁকে যাচ্ছি। বিগত সময়ে পাথরাইলে ৫ হাজার তাঁত ছিল। কিন্ত এখন বর্তমানে ৪০০ তাঁত রয়েছে। চাহিদা কমাতে আমাদের উৎপাদনও কম হচ্ছে।

আরটিভি/এএএ/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |