নিজের পুকুরে যেতে কৃষকের সর্বনাশ করে রাস্তা বানানোর অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। এতে ৪০ বিঘা জমির ক্ষতি হয়। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলায় নাটাই উত্তর ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রামে।
এই ঘটনা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হোসেনের নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকরা।
তারা জানান, কৃষকের মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজ ধানের গাছ। আর মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন পর জমি থেকে কাটা হবে ইরি ধান। তবে এরই মধ্যে ঘটল বিপত্তি। সেই ধান গাছ নষ্ট করে হয়েছে রাস্তা।
তারা আরও জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সরকারি কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) প্রকল্পে কৃষকের লাগানো জমিতে লাগানো ধান গাছ ধ্বংস করে নিজ পুকুরে যাওয়ার রাস্তা বানিয়েছেন ইউপি মেম্বার। এতে করে ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অথচ কাবিখা প্রকল্পের শর্ত অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীন ও বিরোধপূর্ণ কোনো জমিতে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যাবে না বলেও জানান ভুক্তভোগী কৃষকরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটপাড়া বরাক বিলের মাঝ দিয়ে ১০ ফুট প্রশস্ত নতুন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। এ সড়কের শেষ প্রান্তে কোনো বাড়িঘর নেই। রয়েছে কয়েকটি পুকুর। সেই পুকুরের মালিক ইউপি সদস্য ইকবাল হোছাইন ও তার পরিবারের সদস্যরা।
নতুন সড়কটি জমিতে লাগানো ধানের গাছ ও জমি ধ্বংস করে বানানো হয়েছে, ফলে সড়কের দুপাশ গভীর হয়ে নালায় পরিণত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কাবিখা প্রকল্পের টাকায় অনিয়ম করে ইউপি সদস্য ইকবাল হোসেন এই প্রকল্প করেছেন। শুধু মাত্র ইউপি সদস্যের কথায় কোনো প্রকার পরিদর্শন ও কৃষকদের মতামত না নিয়ে কৃষি জমির ওপর দিয়েই এই প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা।
কাবিখা প্রকল্পের নিয়ম গাইডলাইনে বলা আছে— ব্যক্তি মালিকানাধীন অথবা বিরোধপূর্ণ জমিতে এই প্রকল্প দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি শ্রমিক দিয়ে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির অংশ হলেও এই প্রকল্প ভেকু মেশিন দিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন বলেন, এই রাস্তা বানাতে বেশি জমি পড়েনি। আর ভেকু দিয়ে কাটতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস বলেছে, তাই কেটেছি। এই বিষয়ে ইউএনও সাহেব ডেকেছিলেন, তিনি পরিদর্শনে আসবেন। এখন সবাই আপত্তি করায় কাজ বন্ধ রেখেছি।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, ওই গ্রামের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানিয়েছেন, ইকবাল হোসেন নামে একজন মেম্বার তার পুকুরে যেতে একটা রাস্তা নির্মাণ করেছেন। এতে কৃষি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে রাস্তা বা ঘরবাড়ি করতে পারে না, এর জন্যে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিতে হয়। ঘটনাটি আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবগত করেছি।
এই বিষয়ে জানতে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে একাধিক কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত মো. ইশতিয়াক ভূইয়া বলেন, একটি ফসলি জমির ওপর রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ এসেছে। এই বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। উন্নয়ন যেমন দরকার আছে, তেমন কৃষি জমি সংরক্ষণে আমাদের ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব। দেখা হবে রাস্তাটি জনগণের উপকারের কিনা ও কৃষি জমির কোনো ক্ষতি হচ্ছে কিনা।
আরটিভি/এএএ