ঢাকারোববার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে যাওয়া বাংলাদেশি ইয়াসিন নিহত

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি. আরটিভি নিউজ

শুক্রবার, ০৪ এপ্রিল ২০২৫ , ০১:৪৬ এএম


loading/img
ইয়াসিন শেখ। ছবি: আরটিভি

ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ডৌহাখলার যুবক ইয়াসিন শেখের স্বপ্ন ছিলো সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার। নানা চেষ্টায় তা না হলেও সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার স্বপ্নপূরণ হয় রাশিয়ায়। সে রুশ সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক যোদ্ধা হিসেবে যোগ দেয় ইউক্রেন যুদ্ধে। তবে ইউক্রেনের মিশাইল হামলায় থেমে যায় তার স্বপ্নের যাত্রা। ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় ইয়াসিনসহ তার চার সহযোদ্ধার দেহ। গত ২৭ মার্চ ইউক্রেনে যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হয় ইয়াসিন শেখ।

বিজ্ঞাপন

গত ২৭ মার্চ ইয়াসিন নিহত হলেও তার পরিবার জানতে পারেন ঈদের পরদিন। রাশিয়ায় থাকা ইয়াসিনের বন্ধু মেহেদী মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন। ইয়াসিনের মৃত্যুর খরব জানাজানি হওয়ার পর পরিবারে চলছে শোকের মাতম। 

গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের মরিচালি গ্রামের মৃত সত্তর মিয়ার ছোট ছেলে ইয়াসিন শেখ। চার ভাইবোনের মধ্যে দুইজন আগেই মারা গেছেন। মা আর বড় ভাইকে নিয়ে ছিলো তার সংসার। বড় ভাই ব্যবসায়ী রুহুল আমিন তার পড়াশোনা ও বিদেশযাত্রার খরচ বহন করেন। 

বিজ্ঞাপন

রাশিয়ার হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেয়ার ছবি ও ভিডিও নিয়মিত তার ফেসবুকে আপলোড করতো ইয়াসিন। গত ১ মার্চ ফেসবুকে তার বাবার  মৃত্যুবার্ষিকীতে রাশিয়া যাওয়া, সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়া এবং তার স্বপ্নপূরণ নিয়ে একটি ভিডিও আপলোড করে ইয়াসিন। 

ইয়াসিন ভিডিওতে বলেন, গত বছরের জানুয়ারিতে রাশিয়ায় একটি চায়না কোম্পানিতে চাকুরির জন্য আবেদন করে। গত সেপ্টেম্বর মাসে অফার লেটার পেয়ে চলে যায় রাশিয়া। মস্কো থেকে প্রায় ১১ হাজার কিলোমিটার দুরের ওই কোম্পানিতে তিন মাস চাকুরির পর অনলাইনে আবেদন করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে চুক্তিভিত্তিক সৈনিক হিসেবে যোগ দেয়। দেশে না হলেও বিদেশে সৈনিক হয়ে বাবার স্বপ্নপূরণ হয় বলেও জানায় সে। 

ওই ভিডিও আওযামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনের স্মৃতিচারণ ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের জন্যও দোয়া প্রার্থনা করেন ছাত্রদল কর্মী ইয়াসিন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে যোগ দিয়ে তার সাহস ও ইউক্রেন যুদ্ধে যোগ দেয়ার মনোবল তৈরি হয় বলে জানায় সে। যুদ্ধে মৃত্যু হলেও তার কোন আফসোস থাকবে না বলেও ভিডিও জানায় ইয়াসিন। ওই ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করার মাস না পেরুতেই যুদ্ধে ইউক্রেনের মিসাইল হামলায় নিহত হয় ইয়াসিন।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

ইয়াসিনের চাচাতো ভাই রফিকুল ইসলাম রবি জানান, রাশিয়ায় যাওযার জন্য ঢাকায় একটি প্রতিষ্ঠানে রাশিয়ান ভাষা শিখে ইয়াসিন। পরে
বন্ধুর সহায়তার ইয়াসিন রাশিয়ায় একটি কোম্পানিতে ভালো চাকরি পায়। সবই ঠিকটাক মতো চলছিল। পরে রাশিয়া সেনাবাহিনী যোগ দেওয়ায় সব উলটপালট হয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, রাশিয়া সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়ার সময় ইয়াসিনের মা ও বড় ভাইকে গাড়িতে করে ঢাকায় নিয়ে অনাপত্তি পত্রে তাদের স্বাক্ষর নেয় তাকে রাশিয়া প্রেরণকারী এজেন্সির লোকজন। গত ২৬ মার্চ তার মায়ের সাথে শেষবারের মতো কথা বলে ইয়াসিন। কয়েকদিনের মধ্যেই দশ লাখ টাকা পাঠাবে বলে মাকে জানিয়েছিলো সে।

নিহত ইয়াসিনের লাশের কি অবস্থা, লাশ দেশে আনা যাবে কি না তা নিয়ে কোনো তথ্যই পাচ্ছে না ইয়াসিনের পরিবার। ছেলের ছবি নিয়ে মায়ের কান্না থামছেই না। শোকে হতবিহবল পরিবারের সদস্যরা। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

0

এদিকে, খবর পেয়ে গৌরীপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) সুনন্দা সরকার প্রমা মরিচালি গ্রামে ইয়াসিনের বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের খোঁজ-খবর নেন।

গৌরীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাজ্জাদুল হাসান জানান, বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। এ ছাড়া সকল প্রকার আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরটিভি/কেএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |