মেয়েলি অঙ্গ ভঙ্গিতে কনটেন্ট ক্রিয়েট করে সারাদেশে আলোচিত ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার ইমু সাব্বির। সম্প্রতি তাদের কনটেন্ট নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার পাশাপাশি সোচ্চার হয়ে উওঠেন ধর্মপ্রাণ অনেক মুসল্লি। গত সোমবার ইমু সাব্বিরের কনটেন্ট সমকামিতা প্রমোট করছে দাবি করে তাদের ফাঁসি চেয়ে জনসম্মুখে বক্তব্য রাখেন মুফতি আব্দুল হালিম কাসেমী। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ইমু সাব্বির মসজিদে মুচলেকা পাঠ করে হুজুরদের কাছ শপথ করেন মেয়েলি অঙ্গ-ভঙ্গিতে কনটেন্ট না করার।
অভাব অনটনের সংসারে বড় হওয়া সাব্বির হোসেন (২৮) স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক মোটা। তাই অনার্স তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়াশোনা করে তা আর হয়ে ওঠেনি। রিকশাচালক বাবা আজহার আলী ও অন্যের বাড়িতে কাজ করা মা সাজেদা বেগমের দুঃখ ঘোচাতে ২০২০ সাল থেকে ভাগনে ইমু ইসলামকে (২৫) নিয়ে শুরু করেন কনটেন্ট ক্রিয়েট। বেশির ভাগ সময় মেয়েলি অঙ্গ ভঙ্গিতে কনটেন্ট করে বেশ সাড়া জাগান। জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন দেশ ও দেশের বাহিরের মানুষের কাছে। মাসে আয় করেন লাখ টাকারও ওপরে।
সম্প্রতি তার কনটেন্ট নিয়ে শুরু হয় আলোচনা সমালোচনা। এতে সমকামিতাকে সমাজে প্রমোট করা হচ্ছে জানিয়ে গত রোববার ইসরায়েলবিরোধী সমাবেশে ইমু সাব্বিরের বিরুদ্ধে মাইকে বক্তব্য রাখেন কলেজ রোড মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল হালিম কাসেমী। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভাইয়েরা আমরা মুক্তাগাছার হিন্দু, মুসলিম এবং অন্যান্য জাতি মিলেমিশে আছি কিন্তু এই সমাজটাকে কলুষিত করার জন্য ইমু সাব্বির নামে যেই জঘন্য অপরাধ করেছে প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাচ্ছি এই সমকামী সাব্বিরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে ফাঁসির রায় কার্যকর করা হোক।
তার এমন বক্তব্যের পর সাব্বিরের বাড়িঘর ভাঙার গুঞ্জন ওঠে। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সাব্বির।
বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তিনি তার আইডিতে আকুতি জানিয়ে ৩ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করেন। সেখানে বলেন, মুক্তাগাছা আমার প্রিয় জন্মভূমি। এই শহরেই আমি আমার মাকে নিয়ে থাকতে চাই, এই দুনিয়াতে আমি ছাড়া মায়ের আর কেউ নেই। মানুষকে বিনোদন দেওয়ার জন্য আমি আর আমার ভাগনে ফানি ভিডিও করে আসছি ৪ বছর ধরে। কখনো ছেলে কখনো মেয়ে হয়ে ভিডিও করে আসছি।
কিন্তু তা যে সমকামিতা প্রমোট করছে তা বুঝতে পারিনি। আমরা দুজনেই ছেলে, আমাদের পরিবার পরিজন আছে। চার বছরে তা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। আজকে আপনারা সোচ্চার হওয়ায় মেয়েলি অঙ্গ-ভঙ্গিতে আর কনটেন্ট করবো না। তা-ও মুক্তাগাছা থাকতে চাই।
কিন্তু আতঙ্ক না কাটায় স্থানীয় এক মসজিদের ইমামের সহযোগিতায় মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে কলেজ রোড মসজিদে যান। সেখানে গিয়ে মসজিদের ইমাম মুফতি আব্দুল হালিম কাসেমীর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পরে বেশ কয়েকজন মুসল্লির উপস্থিতিতে মুচলেকা পাঠ করেন সাব্বির। তিনি উল্লেখ করেন ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে অনেক কনটেন্ট ও ভিডিও করেছেন যা ইসলামবিরোধী, এতে মুক্তাগাছার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এসময় মাওলানা আব্দুল হামিদ কাসেমীর হাত ধরে শপথ করেন মেয়েলি অঙ্গ-ভঙ্গিতে কনটেন্ট না করার।
সেই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।
জাতীয় নাগরিক কমিটি মুক্তাগাছা উপজেলা শাখার সদস্য ডা. মাকামে মাহমুদ বলেন, মেয়েলি অঙ্গ-ভঙ্গিতে কনটেন্ট তৈরি করার কারণে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যার কারণে ইমু সাব্বিরের প্রতি সাধারণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। বিষয়টি সমাধানের জন্য মসজিদে বসে মুচলেকা পাঠ করে সাব্বির। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও দেওয়া হয়েছে যাতে ইমু সাব্বিরের প্রতি মানুষের ক্ষোভ না থাকে।
মুফতি আব্দুল হালিম কাসেমী বলেন, ইমু সাব্বির যে কনটেন্ট তৈরি করছে তা সমাজে সমকামিতা প্রমোট করছে। তাদের ভিডিও দেখলে যে কেউ বলবে। বিষয়টি ছাত্র জনতার নজরে আসায় তারা ক্ষুব্ধ হন। ইমু সাব্বিরের আক্রোশ কমাতেই তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে যখন সমালোচনা শুরু হয় ইমু সাব্বির তা বুঝতে পেরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে তারা একটি মুচলেকা লিখে মসজিদে এসে পাঠ করেন। আমার হাত ধরে শপথ করেন মেয়ে সেজে আর ভিডিও না করার। আমরা তাদেরকে সকল ধরনের সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছি।
কনটেন্ট ক্রিয়েটর সাব্বির হোসেন বলেন, অভাবের সংসারের হাল ধরতে চার বছর ধরে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে আসছি ভাগনেকে নিয়ে। আমাদের ভিডিও ইসলাম ও সমাজবিরোধী তা কেউ কোন দিন বলেনি। আমাদের সর্তক না করে আমরা সমকামিতা প্রমোট করছি দাবি করে আমাদের ফাঁসি চাওয়ায় হুমকির মধ্যে পড়ে যায়। তাই কিশোরগঞ্জ চলে যাই, পরে ভাবি প্রিয় জন্মভূমি ছেড়ে থাকা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই হুজুরের কাছে ক্ষমা চেয়ে বাড়িতেই থাকছি। তবে আতংক কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, কিছু ভিডিও ইতোমধ্যে পেজ থেকে ডিলিট করা হয়েছে। আর মেয়েলি পোশাকে ভিডিও করবো না। এতে আমাদের আয় কমে যাবে তবুও করার কিছু নেই। আমাদের আয়ের টাকার কিছু অংশ নিয়মিত মসজিদ মাদরাসায়ও দেওয়া হতো।
আরটিভি/এএএ/এস