গ্রামের পথে হাঁটছেন শিব-পার্বতী! 

রাজিউল হাসান পলাশ, ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি

রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫ , ০৯:৩৮ পিএম


গ্রামের পথে হাঁটছেন শিব-পার্বতী! 
ছবি: আরটিভি

গ্রামের পথে হাঁটছেন শিব-পার্বতী। বাড়ি ঢুকছেন, ঢাকের তালে নৃত্য করছেন। শুধু শিব-পার্বতীই নয়, ভৈরব-চন্ডি, রাধাকৃষ্ণসহ নানা দেব-দেবতার অবয়বে সেজে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নাচছেন, গাইছেন ও দক্ষিণা সংগ্রহ করছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী সন্ন্যাসীর দল। এমন দৃশ্যের দেখা মিলল ঢাকার ধামরাই পৌরসভা, গাংগুটিয়া, বারবাড়িয়া, আমতাসহ বিভিন্ন এলাকায়।

বিজ্ঞাপন

রোববার (১৩ এপ্রিল) ঢাকার ধামরাই পৌরসভা, গাংগুটিয়া, বারবাড়িয়া, আমতাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক দলকে বাদ্যের তালে তালে নেচে–গেয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। দলের বেশির ভাগ সদস্য কিশোর, তরুণ ও যুবক।

সংশ্লিষ্টরা জানান, চৈত্রসংক্রান্তি পালনে চৈত্র মাসের শেষ দিনে নানা আয়োজন করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। গ্রামে গ্রামে চৈত্রসংক্রান্তির দিন নীল পূজা ও চড়ক পূজা পালনের রীতি রয়েছে। মূলত বিদায়ী বছরের গ্লানি, ব্যর্থতা ও রোগমুক্তি কামনায় গ্রামের গৃহস্থের বাড়িতে এ পূজার আয়োজন করা হয়।

বিজ্ঞাপন

IMG-20250413-WA0007

এ পূজার অর্থ সংগ্রহে ১০ থেকে ১২ জনের একেকটি দল গঠন করা হয়। দলের সদস্যরা শিব-পার্বতী, রাধা-কৃষ্ণ, লক্ষ্মী, রাম-লক্ষ্মণ, মুনি সেজে গ্রামে গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে নেচে-গেয়ে দক্ষিণা সংগ্রহ করেন।

দক্ষিণা সংগ্রহের পাশাপাশি ধর্মীয় সংগীত আর নৃত্য পরিবেশন করে গ্রামবাংলার মানুষকে বিনোদন দিয়ে থাকে এই দলের সদস্যরা।

বিজ্ঞাপন

সরকারিভাবে ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ হলেও পঞ্জিকা অনুযায়ী একদিন আগেই চৈত্র মাস শেষ হয়। আর এদিনে পঞ্জিকা মেনে পালন করা হয় চৈত্রসংক্রান্তি। এই দিন গ্রামের বাড়ির আঙিনায় মাঙ্গলিক আচার অনুষ্ঠানসহ পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

পৌরাণিক ধর্ম মতে, দেবতারা সমুদ্র মন্থন করলে বিষ উঠে আসে। তখন দেবতা শিব দেখলেন এই বিষ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়লে সমগ্র প্রাণিকুল মারা যাবে। তখন তিনি নিজে বিষ পান করে কণ্ঠে ধারণ করেন। বিষক্রিয়ায় তার কণ্ঠ নীল বর্ণ হয়ে যায়। এ কারণে শিবের অপর নাম নীলকণ্ঠ। প্রাণিকুলের সুখ-সমৃদ্ধির কামনায় চৈত্র মাসের শেষ দিন শিবের গাজন বা নীল পূজা পালন করা হয়। মূলত চৈত্রসংক্রান্তির দিন বছরের বিদায়বেলায় মানুষ অতীতের দুঃখ, কষ্ট, ব্যর্থতা, রোগ, বিপদ আপদ থেকে মুক্তির কামনা করে।

IMG-20250413-WA0009

তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে গৃহস্থের মঙ্গল কামনা করে ধর্মীয় ও বাউল গান এবং নৃত্য পরিবেশন করেন। গান পরিবেশনের পর গৃহস্থরা তাদের চাল, ধান, ডাল, সবজিসহ নগদ অর্থ দেন।

বারবাড়িয়া গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছিল এমনই এক দল। যেখানে শিব-গৌরি সেজেছেন যথাক্রমে ওয়াসিম চক্রবর্তী ও অর্ণব সূত্রধর। তারা বলেন, শিব-গৌরি সেজে বাড়ি বাড়ি ঘুরছি। ভক্তদের কাছ থেকে দক্ষিণা নিচ্ছি। পরবর্তীতে পূজা করা হবে। সেখানে সব ভক্ত যোগ দেবেন।

আরেক দলের সঙ্গে থাকা দীপু সূত্রধর বলেন, এই দল বের করা আমাদের চৈত্র পূজার একটি ঐতিহ্য। প্রতি বছর আমরা এই পূজা করি। বাড়ি বাড়ি ঈশ্বরের ডাক ছড়িয়ে দেই। শিব-পার্বতী, রাধা-কৃষ্ণ সেজে আমরা নাচি ও দক্ষিণা সংগ্রহ করি। রাতে সবাই মিলে পূজা করবো।

উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া গ্রামের সন্ন্যাসী মরণ বলেন, প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তি উৎসবের অর্থ সংগ্রহের জন্য হাটবাজার ও গ্রামে ঘুরে গান নাচ করে টাকা ও উপঢৌকন আদায় করি। উপঢৌকন হিসেবে পাওয়া টাকা ও খাদ্য দিয়ে চৈত্রসংক্রান্তির দিন চড়ক পূজা, শিবের গাজন বা নীল পূজা পালন করি।

আরটিভি/এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission