ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার মোটিফ নির্মাণকারী শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আরও চারজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেছে পুলিশ। এ নিয়ে মোট আটজনকে আটক করা হলো। আটক ব্যক্তিরা সকলেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সদস্য।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া ইউনিয়নের চান্দর গ্রামে মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়ি পরিদর্শনে এসে একথা বলেন ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মোছাম্মৎ ইয়াছমিন খাতুন, বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, মানিকগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইন চার্জ (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ।
অতিরিক্ত ডিআইজ মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা দায়িত্ববোধ থেকে ভাস্কর শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে বসেছি। শিল্পী এবং তার পরিবারের সদস্যদের জীবনের নিরাপত্তাদানে পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।
এছাড়া অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুড়ে যাওয়া ভাস্কর-শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষের ঘরটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। আজ সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে একথা বলেন জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হাসান খান ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেজবাহ-উল-সাবেরিন।
জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, মানবেন্দ্র ঘোষের বাড়িতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটিকে সরকার গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। জেলা প্রশাসন,পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে চলমান তদন্তকাজ শেষ হলে শিল্পীর ইচ্ছা অনুযায়ী সেখানে ঘরটি পুনর্নির্মাণ করা হবে যাতে ঘটনার আলামত নষ্ট না হয়। ইতোমধ্যেই শিল্পীর হাতে ২৬ হাজার টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে শিল্পী মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে এটা অনেক বড় ধরণের ক্ষতি। আমার পরিবার আশঙ্কার মধ্যে রয়েছে-এটা যেসময় সত্যি, তেমনি আমার শিল্পসত্ত্বা চরমভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। আমি জানি না, ভবিষ্যতে আমি সচেতনভাবে শিল্প চর্চা করতে পারবো কি না। কোন নিরপরাধ ব্যক্তি যাতে শাস্তি না পায়। যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হোক।
তিনি বলেন, এই ঘটনাকে নিয়ে যাতে রাজনীতি ও ধর্মীয়করণ না করা হয়। সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে সকলকে সচেতন হতে হবে যাতে প্রকাশিত কিংবা প্রচারিত সংবাদের কারণে আমরা আবার ক্ষতিগ্রস্ত না হই।
উল্লেখ্য, পহেলা বৈশাখের আনন্দ শোভাযাত্রায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মোটিফ তৈরির অভিযোগে ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষকে ফেসবুকে হুমকি দিয়ে আসছিল দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিরাপত্তার জন্য মঙ্গলবার মানবেন্দ্র ঘোষ সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ওইদিন (মঙ্গলবার) দিবাগত রাত তিনটার দিকে তার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এক ঘণ্টা চেষ্টার পর চারটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষ বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় মামলা করেন।
ভাস্কর মানবেন্দ্র ঘোষের দাবি তিনি শেখ হাসিনার মোটিফ তৈরি করেননি। তিনি একটি বাঘের ভাস্কর্য (মোটিফ) তৈরি করেছিলেন যা আনন্দ শোভাযাত্রায় ছিল।
আরটিভি/এএএ