বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী পারভীন আকতার (৪৯) ও দুই মেয়েকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে নাছির উদ্দিন চৌধুরীর দুই ছোট ভাইয়ের বিরুদ্ধে।
গত ১৭ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১২টায় সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর এলাকার আনোয়ারপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১৮ এপ্রিল শুক্রবার দিরাই থানায় অভিযোগ লিখিত অভিযোগ করেছেন নাছির উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী। অভিযুক্ত দুজন হলেন নাছির উদ্দিন চৌধুরীর সৎভাই দিরাই উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাসুক চৌধুরী (৫৫) ও তার আপন ভাই মিলন চৌধুরী (৪০)।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী পারভীন আকতার থানায় একটি অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি জিডি হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। তদন্তের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালত থেকে নির্দেশনা আসার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার দুপুরে এ ঘটনার একটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয় এবং ফেসবুক পোস্টটি ভাইরাল হয়ে যায়। ওই ফেসবুক পোস্টে নারীকণ্ঠের কান্নাকাটি, গালিগালাজ ও চিৎকার চেচামেচির শব্দ শোনা যায়।
অডিওতে মাসুক চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, আপনি কেন আসবেন, কি জন্য আসবেন। আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে। আপনি বেশি করতেছেন, দুই দিন পরপর আসেন। এটা সরকারি হোটেল পাইছেন। উনি (নাছির উদ্দিন চৌধুরী) কোথায় থাকেন, উনি কি খান, কে পালন করে তাকে।
এ সময় তার মেয়েকে বলতে শোনা যায়, মায়ের গায়ে হাত দেবেন না। মাসুক চৌধুরীকে বলতে শোনা যায়, প্রয়োজনে গায়ে হাত তুলবো। এ সময় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও তোমাকে ডিভোর্স দিয়েছে বলতে শোনা যায়। মাসুক চৌধুরী বলতে শোনা যায়, আমরা জানিও না বিয়ে করেছে। অসুস্থ নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে নিচু স্বরে কথা বলতে শোনা যায়। পারভীন আকতারকে বলতে শোনা যায়, আমি তোমার সম্মানের দিকে থাকিয়ে ওদের কিছু বলি নাই।
অভিযোগের বিষয়ে মাসুক চৌধুরী বলেন, আমার বড় ভাই কোনদিন কবে বিয়ে করেছেন তা আমরা জানি না। শুনেছি এই মহিলাকে নাকি ডিভোর্সও দেওয়া হয়েছে। এখন কয়েক দিন পরপর এসে ঝামেলা করে। গত বৃহস্পতিবার রাতে কথা কাটাকাটি হয়েছে এটা সঠিক কিন্তু মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। কিছু লোক আমাদের সম্মানহানির জন্য বিষয়টি ফেসবুকে প্রচার করেছে। এই মহিলাই আমার বড় ভাইয়ের কাজের মহিলা ও ছেলেকে মারধর করেছে। শুনেছি আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগ হয়ে থাকলে পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।
নাছির উদ্দিন চৌধুরীর স্ত্রী পারভীন আকতার অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, মেয়েদের পড়াশোনার জন্য তিনি ঢাকার উত্তরায় বসবাস করেন। তার স্বামী নাছির উদ্দিন চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। স্বামীর দেখভালের জন্য গত ১৭ এপ্রিল রাতে দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিনি দিরাইয়ের আনোয়ারপুরে আসেন। রাতে দেবর মাসুক চৌধুরী ও মিলন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন অতর্কিতে তাদের ওপর হামলা চালায়। লোহার রড, ধারালো অস্ত্র দিয়ে বেধড়ক মারধর করে তাকে ও তার মেয়েদের। মারধরে পারভীন আকতারের মাথা, কান, কাঁধসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়। তার ডান হাতে পড়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে। দুই মেয়েও গুরুতর আহত হন। এ সময় তার অসুস্থ স্বামী নাছির উদ্দিন চৌধুরী নিজেও পরিস্থিতি দেখে বাধা দিতে চাইলেও পক্ষাঘাতগ্রস্ত শরীর নিয়ে কিছুই করতে পারেননি। পরে রাতেই বাসা থেকে বের হয়ে যান।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, তার স্বামী নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে চাইলে দেবর মাসুক চৌধুরী ও মিলন চৌধুরী বাধা দিচ্ছেন। অসুস্থ স্বামীকে সঠিক চিকিৎসা না দিয়ে বিষক্রিয়া হতে পারে এমন ওধুধ খাইয়ে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষে পারভীন ও তার মেয়েরা দিরাই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
নাছির উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাসা-বাড়ির বিষয় নিয়ে পারিবারিকভাবে সামান্য কথা কাটাকাটি ও ঝগড়াঝাটি হয়েছে। স্ত্রীকে আমি ডিভোর্স দেইনি। আমার স্ত্রী ও মেয়েরা দিরাইয়েই আছে। আশা করি, এই বিষয়টি পারিবারিকভাবে নিস্পত্তি হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, এক সময়ে জাতীয় পার্টির রাজনীতি করা নাছির উদ্দিন চৌধুরী দুইবার দিরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে পরাজিত করে সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০০ সালে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন।
আরটিভি/এমকে