বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী তিতাস নদী আজ চরম বিপর্যয়ের মুখে। প্রতিবেশী ভারতের আগরতলা শহর থেকে নির্গত বিষাক্ত বর্জ্য পানি সরাসরি তিতাস নদীতে মিশে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। স্থানীয়রা বলছেন, এই নদী এখন যেন ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরে ভারত থেকে আসা এই বর্জ্য পানির কারণে নদীর স্বাভাবিক জৈবচক্র ভেঙে পড়েছে। নদীর পানি দূষিত হয়ে অক্সিজেন শূন্য হয়ে যাওয়ার কারণে মাছ মরে যাচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে জলজ উদ্ভিদ, অনেক প্রজাতির মাছ, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে এবং নদী-পার্শ্ববর্তী জনগোষ্ঠী চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে।
আঞ্চলিক জীববৈচিত্র্য বিলুপ্তির পথে
তিতাস নদীর ওপর নির্ভরশীল বহু পরিবার নদীর মাছ ধরেই জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু নদীতে এখন আর আগের মতো মাছ নেই। স্থানীয় জেলেরা জানান, পানি এতটাই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে যে মাছের ডিম পাড়ার পরিবেশও নষ্ট হয়ে গেছে।
বিএনপি নেতার প্রতিবাদ ও দাবি
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে সরব হয়েছেন আখাউড়ার বিএনপি নেতা আলহাজ্ব কবির আহমেদ ভূঁইয়া। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, তিতাস নদী আমাদের প্রাণের অংশ। ভারতের আগরতলা শহর থেকে যেভাবে অবাধে বর্জ্য পানি এসে এই নদীটিকে দূষণ করছে, তা কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য মেনে নেওয়া যায় না। সরকারকে অবিলম্বে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিতে হবে এবং আন্তর্জাতিক মহলে বিষয়টি তুলে ধরা উচিত।
তিনি আরও বলেন, এই দূষণের পেছনে প্রশাসনের নীরবতাও দায়ী। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা যদি সক্রিয় না হন, তাহলে আগামী প্রজন্ম আর তিতাস নদীকে চেনার সুযোগ পাবে না।
পরবর্তী পদক্ষেপ কী হতে পারে এ ব্যাপারে তিনি বলেন...
১. সরকারের কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও ভারত সরকারের সঙ্গে আলোচনা।
২. সীমান্ত এলাকায় বর্জ্য শোধনাগার স্থাপন।
৩. নদী রক্ষা আন্দোলনের জাতীয় পর্যায়ে বিস্তার।
৪. স্থানীয় জনগণ ও পরিবেশবাদী সংগঠনের সমন্বয়ে গণস্বাক্ষর ও সচেতনতা ক্যাম্পেইন।
এ ব্যাপারে এখনই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ৪০ লক্ষ মানুষের কণ্ঠস্বরকে জাতীয় পর্যায়ে জানান দিতে হবে। তা না হলে আগামী ১০-১৫ বছরের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার তিতাস নদীর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষজন নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হবে। তারা এখন ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনকি তিতাস নদীর মাছও বিষাক্ত হয়ে গেছে। এই মাছ খাওয়ার কারণে এ অঞ্চলের মানুষ নানাবিধ জটিল রূপে আক্রান্ত হচ্ছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া এখনই জরুরি।
আরটিভি/একে