কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একটি শ্রেণিকক্ষের ভেতরে কয়েকজনকে নিয়ে জুয়া খেলার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের এ ভিডিও ফুটেজের ঘটনায় তোলপাড় চলছে।
শুক্রবার (২ মে) দুপুর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হলে স্থানীয়দের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বেঞ্চে বসা অবস্থায় প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনকে জুয়া খেলতে দেখা যাচ্ছে। তার পেছনের দেয়ালে কালো রংয়ের ব্ল্যাকবোর্ড ও হাতের ডানপাশে লাল-সবুজের রং করা স্কাউটের বেশ কিছু বাঁশও দেখা গেছে। এ ছাড়াও বেঞ্চে বসা হাতের বামপাশে প্লাস্টিকের একটি পানির বোতলও দেখা যায়। পাশাপাশি ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও ফুটেজে একজন ব্যক্তিকে খাটে বা বেঞ্চের মধ্যে শুয়ে থাকায় তার দুটি পা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ৩২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জুয়া খেলার ফাঁকে সিগারেট টানতেই দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে জুয়া খেলা, মাতলামিসহ বহু অভিযোগ আছে। এ ছাড়াও তিনি মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে নানা ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি দেন। কিন্তু আমরা এতদিন প্রমাণ পাইনি। এখন তার অপকর্মের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় এতে প্রমাণ মিলেছে। এ ধরনের প্রধান শিক্ষক স্কুলে থাকার কোন ধরণের বৈধতা নেই। আমাদের সন্তানেরা তার কাছ থেকে কি শিখবে? একজন প্রধান শিক্ষকের কাছে আমরা এই ধরণের অপরাধ ও অনৈতিক আচরণ কখনো কাম্য মনে করি না। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিয়ে দ্রুত প্রদক্ষেপ গ্রহণের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের কাছে ভাইরাল হওয়া ভিডিও সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি আমাদের পিকনিকের একটি ভিডিও। তিন বছর পূর্বে স্কুল থেকে মেহেরপুরে আমরা পিকনিকে গিয়েছিলাম। ওই সময়ে কে বা কারা খেলার সময় ভিডিওটা করেছে। এটি আমার বিদ্যালয়ের ভিডিও না। মূলত বিদ্যালয়ের একটি চক্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে আমার মানসম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য এটা করেছেন। আমার বিদ্যালয়ে এ ধরনের কোন শ্রেণিকক্ষ নেই। চাইলে আপনি এসে দেখে যেতে পারেন।
বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শাহেদুল মোস্তফা বলেন, রশিদ আহমদ চৌধুরী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের জুয়া খেলার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম দেখেছি। ভিডিওটি দেখার পরে বিদ্যালয়ের অপরাপর শিক্ষকের কাছে জানতে চাইলে, তারা বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। এ ছাড়াও প্রধান শিক্ষকের এহেন কর্মকাণ্ডের বিষয়টি বিদ্যালয়ের অভিভাবক প্রতিনিধিকে অবহিত করা হয়। বিষয়টি সম্পর্কে তদন্তপূর্বক বিধিমতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
চকরিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ইউএনও মহোদয় বিষয়টি আমাকে জানালে তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের কাছে ফোন করে জানতে চাই। তখন তিনি ভিডিও ফুটেজটি সম্পর্কে স্কুল থেকে মেহেরপুরে পিকনিকের বলে জানিয়েছেন।
তারপরও বিষয়টি নিয়ে তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে শিক্ষা কর্মকর্তা জানান।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমাকে কেউ জানাননি। তারপরও প্রধান শিক্ষকের বিষয়টি মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতিকে তদন্ত করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আরটিভি/এমকে/এস
