ঢাকাশুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গ্রাহকের সাড়ে ৭ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা এনজিও

পাবনা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ 

বুধবার, ০৭ মে ২০২৫ , ০৬:১১ পিএম


loading/img
সংগৃহীত ছবি

সঞ্চয় ও ডিপিএসের নামে কমপক্ষে ২৫০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনার মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে একটি এনজিওর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল কাইয়ুম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর তিন মাস ধরে পলাতক রয়েছেন তারা। অফিসও তালাবদ্ধ। টাকা হারিয়ে দিশেহারা অসহায় দরিদ্র নারীরা।

বিজ্ঞাপন

ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগীরা। বুধবার (৭ মে) দুপুরে পাবনা প্রেসক্লাবের সামনে আব্দুল হামিদ সড়কে মানববন্ধনে মিলিত হন বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগী নারীরা।

এ সময় প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা অভিযোগ করে বলেন, ২০১১ সালে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেড নামে একটি এনজিও চালু করেন প্রতারক আব্দুল কাইয়ুম। প্রতিষ্ঠানটির নিজে ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার স্ত্রী রঞ্জনা খাতুন চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। তারা বেশ কিছু নারী মাঠকর্মী নিয়োগ করে গ্রামের অসহায় নারীদের টাকা দ্বিগুণ হওয়ার প্রলোভন দিয়ে সঞ্চয় ও ডিপিএসের নামে টাকা জমা নিতে শুরু করেন। 

বিজ্ঞাপন

এরপর একে একে গ্রামের সহজ সরল নারীরা নিজেদের জমানো টাকা লগ্নি করেন এনজিওটিতে। এর মাঝে গত তিনমাস আগে বিভিন্ন গ্রাহকের ডিপিএস এর ৫ বছর মেয়াদ পূর্তির পর লভ্যাংশ সহ টাকা চাইতে গেলে দিতে তালবাহানা শুরু করেন কাইয়ুম। এক পর্যায়ে গ্রাহকদের সমস্ত টাকা নিয়ে উধাও হন তিনি।

ভুক্তভোগীদের দাবি, সমিতির ২৫০ জন গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে গেছেন প্রতারক কাইয়ুম ও তার স্ত্রী। টাকা দিতে সময় নিয়েও তিনি টাকা দিতে পারেননি কাউকে। এক পর্যায়ে অফিস তালা দিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন তারা। তারপর থেকে তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ রয়েছে। নিজেদের কষ্টে উপার্জিত টাকা হারিয়ে দিশেহারা অসহায় নারীরা। তারা অবিলম্বে প্রশাসনের কাছে প্রতারক কাইয়ুম ও তার স্ত্রী রঞ্জনা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান। একই সঙ্গে নিজেদের জমানো টাকা ফেরতের দাবি জানান।

পাবনা পৌর সদরের লাইব্রেরি বাজারের আব্দুল মালেকের স্ত্রী ভুক্তভোগী আফসানা খাতুন বলেন, আমার জমা দেওয়া ২৩ লাখ টাকা নিয়ে প্রতারক কাইয়ুম পালিয়েছে। ফোন বন্ধ। অফিসেও তালা। তাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এখন আমার টাকা কীভাবে ফিরে পাবো সেই চিন্তায় দিশেহারা হয়ে গেছি।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

এনজিওটির মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সদর উপজেলার বলরামপুর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত মোস্তফার স্ত্রী সুলতানা খাতুন। তিনি বলেন, আমি মাঠকর্মী হিসেবে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে মহিলাদের বুঝিয়ে এই এনজিওতে টাকা সঞ্চয় করিয়েছি, ডিপিএস করিয়েছি। আমার মাধ্যমে প্রায় ৮০ লাখ টাকা এনজিওতে জমা হয়েছে। এখন মালিক প্রতারণা করে পালিয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা সব আমার বাড়িতে চড়াও হচ্ছে। টাকার জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি এখন এতগুলো টাকা কীভাবে পরিশোধ করবো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

0

আরেক মাঠকর্মী লাইব্রেরি বাজার এলাকার জামিরুল ইসলামের স্ত্রী নীপা আক্তার বলেন, আমি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে বাড়ির মহিলাদের বারবার বুঝিয়ে তাদেরকে এই এনজিওতে টাকা রাখতে রাজি করিয়েছি। এভাবে প্রায় ৪০ লাখ টাকা তুলে জমা দিয়েছি। এখন টাকা ফেরতের সময় আর মালিক কাইয়ুমকে পাচ্ছি না। তিনি তার স্ত্রীকে নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন। কোথায় গেছেন কিছুই জানি না। তাদের ফোনও বন্ধ। আমরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাচ্ছি।

লস্করপুর এলাকার মৃত মনিরুল হকের স্ত্রী রেহেনা খাতুন তার দুই মেয়ের বিয়ের জন্য রাখা ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা মেঘনা এনজিওতে ডিপিএস করেছিলেন। সেই টাকাও পাচ্ছেন না তিনি। তার আসল টাকা ফেরত চান তিনি।

বলরামপুর গ্রামের হাশেম আলীর স্ত্রী ময়না খাতুন বলেন, আমার পরিবারের চারজন সদস্যের নামে ওই এনজিওতে ডিপিএস করেছিলাম ১৫ লাখ টাকার। এখন টাকা কীভাবে পাবো, প্রতারক তো পালিয়ে গেছে। তাই বলে কি আমাদের টাকা ফেরত পাবো না?

এ বিষয়ে বুধবার বিকেলে পাবনা শহরের দিলালপুরে মেঘনা এমসিসিএস লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। মুঠোফোনে কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করে অভিযুক্ত আব্দুল কাইয়ুম ও তার স্ত্রী রঞ্জনা খাতুনের ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

পাবনা সদর থানার ওসি আব্দুস সালাম বলেন, এ বিষয়ে কেউ থানায় অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরটিভি/এএএ/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |