ঢাকাশনিবার, ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গাছ কাটার প্রমাণ তদন্তে মিললেও প্রতিবেদনে নাম নেই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার

রংপুর প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

রোববার, ১১ মে ২০২৫ , ০২:২৬ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস চত্বরের সরকারি গাছ টেন্ডার বা বন বিভাগের পরামর্শ ছাড়াই কাটার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কে এম ইফতেখারুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এ ঘটনার তদন্তের পর বিভাগীয় পুনঃতদন্ত হলেও ধরা ছোঁয়ার বাইরে ওই কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

সরকারি গাছ কাটার ঘটনায় গত ১৯ মার্চ জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের তদন্তের পর বিভাগীয় পুনঃতদন্ত হয় গত ২২ এপ্রিল। রংপুর বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ডেপুটি চিপ ইপিডিমিওলজিস্ট ডা. রফিকুল আলমের নেতৃত্বে বিভাগীয় পুনঃতদন্তকালে স্থানীয়জন ও গণমাধ্যমকর্মীরা কর্তনকৃত গাছের গোঁড়ার অবশিষ্ট অংশবিশেষ (প্রমাণাদি) তদন্ত কর্মকর্তাদের সরেজমিনে (অফিস চত্বর) ঘুরে ঘুরে দেখান এবং গাছ কাটার প্রিন্ট ছবিসহ লিখিত সাক্ষী দেন।

স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের চত্বরের প্রধান ফটক ও মূল ভবনের পেছনে থাকা মেহগনি, কাঁঠাল, জাম্বুরা ও আমসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সরকারি বিধি লঙ্ঘন করে কাটা হয়েছে। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কেএম ইফতেখারুল ইসলাম কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গাছগুলো কেটে বিক্রি করেন। আমরা তো প্রত্যক্ষদর্শী, আমাদের সামনে গাছ কেটেছে এবং বিক্রি করেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রসঙ্গত, তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস চত্বরের গাছগুলো কাটার ঘটনায় টেন্ডার বা বন বিভাগের পরামর্শ এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে নিশ্চিত করেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আবু সাঈদ ও উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান খাঁন।

এ ছাড়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কেএম ইফতেখারুল ইসলাম সাংবাদিকদের সঙ্গে অফিস সাক্ষাৎকারে গাছ কাটার বিষয়টি নিজেই স্বীকার করেছেন। যদিও তিনি ভুলবশত গাছগুলো কেটেছেন বলে জানান। আবার বিভাগীয় পুনঃতদন্তকালে স্থানীয়রা ও গণমাধ্যমকর্মীরা তদন্ত কমিটিকে কর্তনকৃত গাছের দৃশ্যমান গোঁড়াসহ গাছ কাটার সমস্ত তথ্যপ্রমাণ দেখান।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা কেএম ইফতেখারুল ইসলাম তারাগঞ্জ উপজেলা বন কর্মকর্তার কাছে ব্যাকডেটে গাছ কাটার অনুমোদনপত্র চেয়েছিলেন। উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান খাঁন রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা, চাকরিবিধি ও নৈতিক মূল্যবোধ থেকে ব্যাকডেটে গাছ কাটার অনুমোদন দিতে অস্বীকার করেছেন। পরবর্তীতে তিনি গাছ কাটার প্রমাণ লোপাট করতে কর্তনকৃত গাছের গোঁড়ার অবশিষ্ট দৃশ্যমান অংশ কেটে ফেলেন। অবৈধভাবে গাছ কাটার সঙ্গে অফিসের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত আছেন।

বিজ্ঞাপন
Advertisement

এদিকে গাছ কাটার পুনঃতদন্তের বিষয়ে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেয়েছি, হেড অফিসে পাঠিয়েছি। তদন্তে গাছ কাটার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তদন্ত প্রতিবেদন চাইলে, গোপনীয়তার স্বার্থে তিনি তা দিতে অস্বীকার করেন।

তদন্তের বিষয়ে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বক্তব্যের বরাদ দিয়ে (গাছ কাটার সত্যতা পাওয়া যায়নি) তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. রফিকুল আলম বলেন, আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে পুনঃতদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এর বাইরে কিছু বলতে পারব না।

অন্যদিকে জনস্বার্থে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ও পরিবেশ রক্ষায় তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের গাছ কাটার বিষয়টি নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে স্ব-দপ্তর (প্রাণিসম্পদ দপ্তর) ছাড়া অন্যকোনো দপ্তর দিয়ে উচ্চতর তদন্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয়দের।

উল্লেখ্য, অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাটলেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা-প্রকল্পের টাকা লুটপাটের অভিযোগে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার অপসারণ দাবি এবং সেই প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুনঃতদন্ত শিরোনামে গত ৭ মার্চ, ১৮ মার্চ এবং ২৪ এপ্রিল বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এ ঘটনায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার বিচার দাবিতে স্থানীয়রা মানববন্ধন করেন।

আরটিভি/এফএ/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |