ঢাকামঙ্গলবার, ১০ জুন ২০২৫, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোটি কোটি টাকার বিদ্যুৎ গেল কোথায়? 

কামাল হোসেন

বুধবার, ২৮ মে ২০২৫ , ০২:২৭ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি

অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর বিদ্যুৎ অফিস। পিয়ন থেকে শুরু করে নির্বাহী প্রকৌশলী পর্যন্ত যে যেভাবে পারছেন নিজের পকেট ভারি করছেন। মিটার না দেখে ভুতুড়ে বিল করায় অফিসের কাছেই গ্রাহকদের পাওনা এখন কয়েক কোটি টাকা। এ ছাড়াও রয়েছে লাখ লাখ মিটার বাণিজ্য। সম্প্রতি দুদকের অভিযানে মিলছে দুর্নীতির সত্যতা। ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা চেয়েছেন এর প্রতিকার। সদ্য যোগদানের কথা বলে নিজের দায় এড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন নির্বাহী প্রকৌশলী। 

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের অধীনে ৫০ হাজারেরও বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই পোষ্ট পেইড গ্রাহক। দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে। গ্রাহকদের মিটার রিডিং ও বিলে আকাশ-পাতাল গরমিল, ঘুষ বাণিজ্য, মিটার বাণিজ্য এবং গ্রাহকদের সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্ব্যবহারের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সকল অনিয়ম যেন এখানে নিয়মে পরিণত হয়েছে। মিটার না দেখেই ইচ্ছে মত বিল করে যাচ্ছে অফিসের লোকজন। এতে করে ১ হাজার ইউনিট থেকে ১০ হাজার ইউনিট পর্যন্ত গরমিল দেখা গেছে বিলের সঙ্গে মিটার রিডিংয়ের। এ রকম গ্রাহকের সংখ্যা কয়েক হাজার। ফলে বিদ্যুৎ অফিসের কাছে গ্রাহকদের পাওনা এখন কয়েক কোটি টাকা। প্রতিবাদ করলে গ্রাহকদের সঙ্গে করা হয় দুর্ব্যবহার, দেওয়া হয় মামলার হুমকি। এ রকম হয়রানিতে অসহায় গ্রাহকরা।

অভিযোগ রয়েছে, প্রিপেইড মিটার বিদ্যুৎ অফিস থেকে একহাজার থেকে ক্রয় করেন খোদ অফিসের কর্মচারীরা। পরে তা গ্রাহকের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন তারা। শুধু তাই নয়, সেচ পাম্প মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ করে তাদের বিল কমিয়ে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়। এতে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অফিসের একটি চক্র। 

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় জিগাতলা গ্রামের ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ অফিসের কর্মচারি জাহিদ ও কমলকে নিয়মিত মাসোহারা না দিলে পরের মাসেই তাদের বিদ্যুৎ বিলে বিশাল অঙ্কের টাকা যোগ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ব্যবহৃত বিদ্যুতের পরিমাণের সঙ্গে মিটারের রিডিং এবং মাসের শেষে আসা বিলের মধ্যে থাকে ব্যাপক ফারাক। এই সকল অসঙ্গতি নিয়ে বিদ্যুৎ অফিসে গেলে সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গ্রাহকদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।

ভুক্তভোগী আব্দুল খালেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার মিটারের সঙ্গে বিলের কোনো মিল নেই। আমি সরকারের কাছে ৮ হাজার ইউনিট বিদ্যুৎ বিল পাবো।

রাইহান মাস্টার ও মো. সেলিমসহ এলাকার বহু মানুষ একই ধরনের অভিযোগ করে এর সমাধান দাবি করেছেন। 

বিজ্ঞাপন

এ দিকে আলতাফ হোসেনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি দিনব্যাপী উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামে বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে গিয়ে ভুক্তভোগীসহ অন্যান্য গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিলের কাগজ ও মিটার রিডিং সরেজমিনে দেখে টাঙ্গাইলের দুদক। পরে বিদ্যুৎ বিলের সঙ্গে মিটার রিডিংয়ের গড়মিলের সত্যতা পান তারা। অভিযানে নেতৃত্ব দেন টাঙ্গাইল দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নূরে আলম। অভিযানকালে দুদকের দলটি বিদ্যুৎ অফিসের বিভিন্ন কাগজপত্র, মিটার রিডিং প্রক্রিয়া এবং বিলিং সিস্টেম খতিয়ে দেখেন। এ সময় তারা গ্রাহকদের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা খুঁজে পান। 

বিজ্ঞাপন

দুদকের সহকারী পরিচালক মো. নূরে আলম সাংবাদিকদের বলেন, ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর বিষয়ে আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই অবগত ছিলাম। অভিযানে আমরা অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ পেয়েছি। প্রতিবেদনটি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করবো। 

অভিযোগের বিষয়ে ভূঞাপুর বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার কামরুজ্জামান বলেন, গ্রাহকদের কিছু অভিযোগ আমাদের নজরে এসেছে। আমরা এই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করবো এবং কেউ দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

আরটিভি/এমকে/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |