ঢাকাশুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সাগরে ভেসে গেল প্রায় ৫ কোটি টাকার সড়ক

কুয়াকাটা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ 

বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ , ০৯:৪৬ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি

সৌন্দর্য বর্ধন ও পর্যটকদের চলাচলের সুবিধার্থে কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যোগে হোটেল সিভিউ থেকে ঝাউবন পর্যন্ত ১ হাজার ৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প এখন চরম সমালোচনার মুখে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই জোয়ারের পানিতে রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ ধসে পড়েছে। এতে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

গত কয়েক দিনের লঘুচাপের প্রভাবে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। এ ভাঙনে মেরিন ড্রাইভ ও পাশের সবুজ বেষ্টনীর প্রকল্প মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, পুরো এলাকাটিই যদি দ্রুত পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তাহলে আরও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে।

পৌরসভার তৎকালীন মেয়র আনোয়ার হাওলাদারের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী কুয়াকাটা পৌর শ্রমিক লীগের সদস্য সচিব ছগির মোল্লার মালিকানাধীন মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স, আরেক সহযোগী পৌর শ্রমিক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলাল হোসেনের মালিকানাধীন মেসার্স আবরার ট্রেডার্স ও সাবেক পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কনটেন্ট ক্রিয়েটর সাদ্দাম মালের মালিকানাধীন এস এম ট্রেডার্স স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে কাজ পায় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ইট ও বালু দিয়ে নিম্নমানের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ, পৌর মেয়রের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাননি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের বিপরীতে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকার বিল উত্তোলন করা হয়েছে।

ঘটনার পরপরই স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। অনেকে বলছেন, পরিকল্পনাহীনভাবে গাইড ওয়াল ছাড়া কাজ করায় রাস্তা ভেঙে পড়েছে।

স্থানীয় প্রশাসন, নাগরিক সমাজ ও পর্যটকদের চোখে এখন এ প্রকল্পটি ‘দৃষ্টান্তমূলক ব্যর্থতা’র প্রতীক। কোটি টাকার প্রকল্পে দায়িত্বহীনতা, স্বজনপ্রীতি ও পরিকল্পনার অভাব—সব মিলিয়ে প্রকৃত তদন্ত ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছেন সকলে।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় বাসিন্দা ইব্রাহিম বলেন, এত টাকা খরচ করে কাজ করা হয়েছে। অথচ উদ্বোধনের করার আগেই ভেঙে গেল।

বিজ্ঞাপন

কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন আমির বলেন, গাইড ওয়াল ছাড়া এমন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় রাস্তা নির্মাণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পরিকল্পনা ছাড়া সরকারের কোটি টাকার প্রকল্প এভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়া উদ্বেগজনক।

এস এম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সাদ্দাম মাল বলেন, আমি সরাসরি কাজ করিনি, রুহুল আমিন নামে একজনকে সাব-কন্ট্রাকে দিয়েছিলাম। তবে রুহুল আমিনের ফোন নম্বর তিনি দিতে পারেননি। অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকদের ফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কুয়াকাটা পৌরসভার প্রকৌশলী সুজন বলেন, তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট রুট ম্যাপ অনুযায়ী কাজ দেওয়া হয়। ইতোমধ্য তারা দেড় কোটি টাকা উত্তোলন করেছে। কাজ এখনো চলমান রয়েছে। অনিয়ম প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক মেয়র আনোয়ার হাওলাদার স্বজনপ্রীতির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, টেন্ডার প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই কাজ দেওয়া হয়েছে।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা ক্ষুব্ধ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে চিঠি তৈরি করা হয়েছে। বকেয়া বিল, জামানত বাজেয়াপ্তসহ ক্ষতিপূরণ আদায়ের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

আরটিভি/এএএ-টি 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |