বৃদ্ধ সমির উদ্দিন মণ্ডল জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন বিষধর সাপের সঙ্গে। গড়ে উঠেছে একধরনের সখ্যতা আর ভালোবাসা। হয়তো তাই জীবনের শেষবেলায়ও সাপের জন্য ছুটে যান হাসপাতালে। চিকিৎসকদের উদ্দেশে বলেন, এই সাপটার জ্বর হয়েছে।
ঘটনাটি ঘটে শনিবার (৩১ মে) দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এসময় চিকিৎসকেরা বিস্মিত হন, তাকে বুঝিয়ে বলেন, এটি প্রাণিসম্পদের দেখার বিষয়। তারপর হাসপাতাল থেকে চলে যান সমির।
এই গল্পের শেষটা ছিল করুণ। রোববার (১ জুন) সকাল ১০টার দিকে সমির মণ্ডল তার সংগ্রহে থাকা গোখরা সাপ নিয়ে বাড়ির বাইরে বের হচ্ছিলেন। আচমকাই সাপটি ছোবল দেয়। সাপের বিষে দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন সমির। তাকে চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে পথিমধ্যে মারা যান।
সমির উদ্দিন মণ্ডলের ভাতিজা মেহেদী হাসান বলেন, সমির চাচা ছোটবেলা থেকে সাপ ধরতেন, ঝাড়ফুঁক করতেন। সাপ ধরে সৈয়দপুরে বিক্রি করতেন। কেউ দেখতে চাইলে দেখাতেন। আজ সাপ নিয়ে তিনি বাইরে কাকে যেন দেখাতে যান। বস্তা থেকে বের করার সময় চাচাকে ছোবল দেয়। কাঁপতে কাঁপতে বাড়িতে এলে তাকে তারাগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে থেকে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান। চাচার লাশ এনে বাদ আসর আমরা দাফন করেছি।
মেয়ে ও নাতিদের নিয়ে ছিল সমির উদ্দিনের সংসার। নানা সমিরকে হারিয়ে বাক্রুদ্ধ নাতি সাইফুল ইসলাম। সমির উদ্দিনের মৃত্যু নিয়ে এলাকার সব জায়গাতেই চলছে আলোচনা।
প্রতিবেশী রেজাউল করিম বলেন, সমির মণ্ডল ছিলেন এক ব্যতিক্রমী প্রাণিপ্রেমিক। সাপ ছিল তার সন্তানতুল্য। কেউ কল্পনাও করতে পারেনি, নিজের প্রিয় সাপই একদিন উনার মৃত্যু ডেকে আনবে। সমির মণ্ডলের মৃত্যু শুধু একটি দুঃখজনক দুর্ঘটনা নয়, এটি যেন এক জীবনভর ভালোবাসা আর বিশ্বাসের পরিসমাপ্তি।
তারাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. হামদুল্লাহ বলেন, সাপের দংশনের শিকার হওয়া এক বৃদ্ধকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। শুনেছি তিনি মারা গেছেন।
আরটিভি/একে