ঢাকামঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২

বৃদ্ধাশ্রমে মায়েদের ঈদ, চোখের পানিতেই কেটে যায় দিন

শিপলু জামান

শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫ , ০৯:৫৪ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি

ঈদ মানেই খুশি, ঈদ মানেই পরিবার, কাছের মানুষের ভালোবাসা। তবে সেই ভালোবাসা আজ নিঃশেষ হয়ে গেছে ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার জোড়া পুকুরিয়া এলাকার একটি বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রয় নেওয়া মায়েদের জীবনে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া ২০ জন মা সেখানে ঈদের দিন কাটান নিঃসঙ্গতা আর কান্নার মধ্যে।

বিজ্ঞাপন

রহিমা বেগম—তিন ছেলে, এক মেয়ের জননী। এক সময় সংসারে সুখেই ছিলেন। সন্তানদের পড়াশোনা, চাকরি, বিয়ে—সবই করেছেন নিজ হাতে। কিন্তু স্বামী মারা যাওয়ার পর বদলে যায় জীবন। অসুস্থ হলে সন্তানেরা হয়ে ওঠে বিরক্ত। এক সময় ঘর ছাড়তে বাধ্য হন রহিমা। আজ তার ঠাঁই জোড়া পুকুরিয়ার এই বৃদ্ধাশ্রমে। মুখে হাসি নেই, চোখে শুধু পানি। বললেন, ‘সন্তানরা খোঁজ নেয় না। ঈদের দিনটাও কেউ পাশে নেই।

আরেক মা কুলসুমা বেগম বলেন, ইদের দিনটা খুব কষ্টের। সবাই যখন আপনজন নিয়ে খুশিতে মেতে ওঠে, তখন আমরা চার দেয়ালের ভেতর কাঁদি।

বিজ্ঞাপন

ঈদের দিন সকালে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে দেখা যায়, মায়েরা নিজেরা মিলে গল্প করছেন, কেউবা চুপচাপ বসে আছেন। ঈদ কেমন লাগছে জানতে চাইলে সুফিয়া বেগম হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন। বলেন, আমাদের মতো সন্তান যেন কারও না হয়।

এক সময়কার সংসারের সুখ স্মৃতি আঁকড়ে ধরেই এখন দিন পার করছেন তারা। সন্তানদের জন্য জীবনের সব ত্যাগ স্বীকার করা মায়েদের আজ স্থান হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে। ঈদের দিনও তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি কেউ। তবে সেবায় নিয়োজিতরা চেষ্টা করেছেন আনন্দ দিতে। 

ইসমত আরা, এই বৃদ্ধাশ্রমের দেখভাল করেন। তিনি জানান, সকালে মায়েদের সেমাই দেওয়া হয়েছে, দুপুরে রান্না হয়েছে ডিম, আলু ভর্তা আর ডাল। রাতে কোরবানির মাংস কেউ দিলে রান্না করব, না হলে একই খাবারেই দিন কাটবে।

বিজ্ঞাপন

বৃদ্ধাশ্রমে থাকা একজন মা বলেন, সন্তান, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে ঈদ কাটানোর কথা ছিল। ভাগ্য খারাপ, তাই এখানে। তবে এখানকার মানুষজন ভালো, যতটুকু সম্ভব খেয়াল রাখে আমাদের।

বিজ্ঞাপন

বৃদ্ধাশ্রমের ঈদ তাই উৎসবের নয়, বরং না-পাওয়ার কষ্টে মুখ লুকিয়ে কাঁদার দিন। সেই কষ্টের কাছে সেমাই কিংবা ভালো খাবারও যেন অনর্থক। সন্তানদের একটুখানি সান্নিধ্যই ছিল তাদের সবচেয়ে বড় চাওয়া।

আরটিভি/এএএ/এআর

 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...

Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |