নদীমাতৃক বাংলাদেশে ১৪ ও ১৭ বছর বয়সী দুই ছাত্র-ছাত্রীকে পুকুরে সাঁতার শেখাতে গিয়ে পৃথক ঘটনায় বাবা-মেয়ে ও চাচা-ভাতিজার প্রাণহানি হয়েছে। ওই দুই ছাত্র-ছাত্রী ঈদের ছুটিতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন।
সোমবার (৯ জুন) মৌলভীবাজারের জুড়ী ও চট্টগ্রামের পটিয়ায় এ বেদনায়ক ঘটনা ঘটে। উভয় ঘটনায় ওই এলাকায় শোকাবহ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
বিকেলে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ইউনিয়নের হামিদপুর গ্রামে বাবা-মেয়ের ঘটনা ঘটে। তারা হলেন- হামিদপুর গ্রামের বাসিন্দা ইটভাটা ব্যবসায়ী বাবুল আহমদ (৬০) ও তার মেয়ে হালিমা মোহাম্মদ (১৭)। হালিমা ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী। ২৬ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া এইচএসসি পরীক্ষার তার অংশগ্রহণের কথা ছিল।
এর আগে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের পটিয়ায় উপজেলার আশিয়া ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে চাচা-ভাতিজার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তারা হলেন- উপজেলার বাথুয়া গ্রামের নাছির উদ্দীন চৌধুরী (৫২) ও তার ভাতিজা আরিয়ান চৌধুরী (১৪)। আরিয়ান চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে নাছির উদ্দীনের ছোট ভাই আইয়াছ উদ্দীন বাহারের ছেলে।
বাবা-মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, বাবুল আহমদের স্ত্রী তিন মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তাদের চার সন্তান সেখানে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। বাড়ির কাছে মানিকসিংহ এলাকায় বাবুলের একটি ইটভাটা রয়েছে। ঈদুল আজহা উপলক্ষে চার-পাঁচ দিন আগে তার স্ত্রী-সন্তানেরা বাড়িতে বেড়াতে আসে। তার সন্তানেরা সাঁতার জানে না। সোমবার বিকেল চারটার দিকে মেয়ে হালিমাকে নিয়ে পুকুরে নেমে প্লাস্টিকের টিউবের সাহায্যে সাঁতার শেখাচ্ছিলেন বাবুল। একপর্যায়ে টিউব থেকে হাত ফসকে হালিমা পানিতে ডুবে যায়। এ সময় বাবুল মেয়েকে রক্ষার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুজনই পানি থেকে উঠছিলেন না। আশপাশের লোকজন ছুটে গিয়ে পুকুরে নেমে প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। পরে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে দুজন মারা যান।
অন্যদিকে, চাচা-ভাতিজার মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় ও পরিবারের সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, চাকরি সূত্রে চট্টগ্রামের রাউজানে ভাড়া বাসায় থাকে আইয়াছ উদ্দীনের পরিবার। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে তারা গ্রামে এসেছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চাচা নাছির উদ্দীন ভাতিজা আরিয়ানকে সঙ্গে নিয়ে পুকুরে গোসল করতে যান। এ সময় তিনি আরিয়ানকে সাঁতার শেখাতে শেখাতে পুকুরের মাঝখানে চলে যান। দুজনই সাঁতার জানতেন না। একপর্যায়ে তারা পানিতে তলিয়ে যান। এরপর দীর্ঘ সময় ঘরে না ফেরায় স্বজনেরা তাদের খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। পরে স্থানীয় লোকজনসহ স্বজনেরা পুকুরে নেমে তাদের খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
আরটিভি/কেএইচ