ঢাকাশুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

এক হামলা, তিন ভাষ্য, ধামরাইয়ে জখম সাংবাদিককে ঘিরে রহস্য

ধামরাই (ঢাকা) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ 

শনিবার, ২১ জুন ২০২৫ , ০২:৪০ পিএম


loading/img
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার ধামরাইয়ে আব্দুল মান্নান (৫৫) নামে স্থানীয় এক সাংবাদিককে কুপিয়ে জখমের ঘটনায় মামলার পর প্রকাশ্যে এসেছে এক ঘটনার তিন ধরনের ভাষ্য, তৈরি হয়েছে রহস্য। জখম আব্দুল মান্নান, তার স্ত্রী এবং ভাই—তিনজনের ভাষ্যে আংশিক ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য উঠে আসে। এমনকি কি ধরণের অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে তা নিয়েও পাওয়া গেছে ভিন্ন ভাষ্য। 

বিজ্ঞাপন

শুক্রবার (২০ জুন) মামলার এজাহারে লেখা হয় তার পায়ে আঘাত করা হয় দা দিয়ে। তবে হামলার ঘটনার পর ১৫ জুন ধামরাই থানায় ভুক্তভোগীর ভাইয়ের করা অভিযোগে লেখা হয়, ভুক্তভোগীকে চাইনিজ চাপাতি দিয়ে আঘাত করা হয়। আর ভুক্তভোগী নিজে হামলার পরপর বলেন, সুইচ চাকু সদৃশ কিছু দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়।

এছাড়া ভুক্তভোগীর দাবি, হামলাকারীরা ছিলেন মুখোশ পরিহিত। তাদের চিনতে পারেননি। এমনকি তার ভাইয়ের করা অভিযোগে হামলাকারী কারো নাম উল্লেখ করা হয়নি। অজ্ঞাত ২-৭ জন হামলা করে বলে লেখা হয়। আর তার স্ত্রীর করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় এক সাংবাদিকসহ ছয়জনের নাম। এরমধ্যে অভিযুক্ত সাংবাদিকের দাবি, আব্দুল মান্নান চাঁদাবাজিকালে গ্রেপ্তার হওয়ার প্রতিবেদন করার কারণে তাকে মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এমনকি ঘটনার সময় তিনি এক সাবেক চেয়ারম্যানের সঙ্গে ছিলেন। যা নিশ্চিত করেছেন সেই সাবেক চেয়ারম্যানও।

বিজ্ঞাপন

গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের নান্দেশ্বরী বটতলা এলাকায় এ ঘটা ওই ঘটনায় শুক্রবার (২০ জুন) ধামরাই থানায় এক সাংবাদিকসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন জখম সাংবাদিকের স্ত্রী সালমা আক্তার। আহত সাংবাদিক মো. আব্দুল মান্নান বর্তমানে সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

মামলায় আসামিরা হলেন- ধামরাইয়ের বালিয়া ইউনিয়নের বালিয়া ইউনিয়নের নুরে আলম সিদ্দিকী নান্নু (৫০), মো. সুমন (৩৫), মো. রিয়াজ (৩৬), নুর আলম (২৮), সোহেল (২২) ও আবুল কালাম (২০)। এরমধ্যে মো. সুমন (৩৫) দৈনিক বাংলাদেশ বুলেটিনের ধামরাই প্রতিনিধি ও ধামরাই রিপোর্টার্স ক্লাবের কার্যনির্বাহী সদস্য।

এদিকে মামলার ঘটনায় বিস্মিত সাংবাদিক ও সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া মামলার ভিন্ন ভিন্ন ভাষ্য নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।

বিজ্ঞাপন

সালমা আক্তারের করা মামলায় বলা হয়, ‘পূর্ব বিরোধের জেরে দা, লাঠি, রডসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই ছয়জন রাস্তায় ওত পেতে থেকে তারা আব্দুল মান্নানের পথরোধ করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। এরপর দ্বিতীয় আসামি সুমন দা দিয়ে তার পায়ে কোপ দেয়, এতে মারাত্মক রক্তাক্ত জখম হয়।’’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে ভুক্তভোগীর ভাই আব্দুল হক দায়ের করা অভিযোগপত্রে কারো নাম উল্লেখ ছিল না। সেখানে তিনি লেখেন, ৬-৭ জন কালো মুখোশ পড়া অস্ত্রধারী অজ্ঞাত ব্যক্তি আমার ভাইকে কুপিয়ে জখম করে। ভাই চিৎকার করলে পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এদিকে আব্দুল মান্নান গত ১৫ জুন ওই ঘটনার পর সংবাদমাধ্যমকে চাকু দিয়ে হামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, ‘‘পাশে থেকে দুই ছেলে এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ধরেছে, ধরার পরে ও আমাকে বললো, ‘ওরে জানে মারিস না’। ওখান থেকে পায়ের রগ কাট। তখন আমার পায়ের নিচে একটা চাকু দিয়ে ধরেছে, যেটা চাপ দিলে চাকু বের হয়। ওটা আমার পায়ের নিচ দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়েছে, যখনই টান দেবে। আমি ওর মাথায় ঘুষি দেই।

তবে শুক্রবার আব্দুল মান্নান এই প্রতিবেদককে ছ্যান দা দিয়ে হামলা করা হয়েছে উল্লেখ করে বলেন, সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে একা বাড়ি ফেরার পথে ছয়জন আমার ওপর হামলা করে। এরমধ্যে তিনজন মুখোশধারী ছিল। তারা স্বর বদলে কথা বলে। প্রথম মুখোশধারী তিনজন হামলা করে। এ সময় দ্বিতীয় আসামি (সুমন) ছ্যান দা দিয়ে প্রথম হামলা করে, তার বয়স ৩৫-৩৬। তারপরই আঘাত করে নুরে আলম ও সোহেল। তখন আমি চিৎকার দেই। তখন ওরা বলছে, কি হয়েছে। আমি এরমধ্যে মাটিতে পড়ে গেলে পথচারীরা আমাকে উদ্ধার করে। এরপর প্রায় ১০ ফুট দূরে থাকা বাকি তিনজন বসে ছিল। প্রথম তিনজন আঘাতের পর আমি তাদের লাথি মারি। তখনই সুমন আমাকে চাকু মারে। প্রায় ১৭-১৮ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে পুরো ঘটনাটি ঘটে।

ভাইয়ের করা অভিযোগে কারো নাম ছিল না কেন প্রশ্নে তিনি বলেন, ভাইয়ের করা অভিযোগে কারো নাম ছিল না, কারণ তখন আমি ভীষণ আতঙ্কে ছিলাম, কিছু বলতেও পারিনি। পরে সুস্থ হয়ে আমি মামলা করি, যাতে কেউ সতর্ক হয়ে পালিয়ে না যায়। 

এছাড়া হামলার দিনে বক্তব্যেও কারো নাম বলেননি কেনো প্রশ্নে তিনি বলেন, তখন নাম বলিনি, কারণ নাম বললে তারা হয়তো সতর্ক হয়ে সরে যেতো। আমি চিন্তা করছি, সুস্থ হয়ে নেই। মামলা দায়ের করি। ওরা যেন ভাগতে না পারে।

পায়ের কি অবস্থা বর্তমানে প্রশ্নে তিনি বলেন, আগের চেয়ে ভালো। হাঁটা চলা করতে পারি। তবে একটু টান লাগে। একটা রগ কাটতে পারছে। এরপর সাটুরিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। গত ১৫ জুন থেকে এখনও ভর্তি রয়েছি।

এদিকে এজাহারে দুই নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ থাকা সুমন হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি এই ঘটনায় জড়িতের কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটা পুরোপুরি মিথ্যা। ঘটনাটি যখন ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, সেই সময় আমি আমতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম লাবুর বড়নারায়নপুর (বাউখন্ড) এলাকার কার্যালয়ে অবস্থান করছিলাম। বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত আমি তারই সঙ্গে বসা। এর আগে, আব্দুল মান্নান চাঁদাবাজির অভিযোগে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। সেই প্রতিবেদন করার পর থেকেই তিনি আমার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। সেজন্যই হয়তো মিথ্যা মামলায় তিনি আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ধামরাইয়ের আমতা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম লাবুকে ফোন করলে তিনি বলেন, রোববার বড় নারায়নপুর আমার অফিসে আমরা বসেছিলাম। সুমন এখানে এসেছিল। সন্ধ্যার একটু আগে আসে, এরপর রাত প্রায় ৮টা পর্যন্ত আমার সঙ্গেই ছিল।

এ বিষয়ে ধামরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা নেওয়া হয়েছে। তদন্ত করে মামলার আসামি গ্রেপ্তার ও পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ২ এপ্রিল ধামরাইয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে র‌্যাব-৪ গ্রেপ্তার করে মো. আব্দুল মান্নানকে। তিনি বর্তমানে ‘সংবাদ দিগন্ত’ নামে একটি পত্রিকার সাংবাদিক বলে জানান।

আরটিভি/এএএ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |