ঝালকাঠি সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন এলাকায় তালঘাছ কেটে শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যা করা অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুক্রবার বিকালে একদল পাষণ্ড ব্যক্তি এলাকার একটি বিশাল তালগাছ কেটে ফেলেন। গাছটিই ছিল শতাধিক বাবুই পাখির বাসা ও প্রজননের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল।
শনিবার (২৮ জুন) সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ঝালকাঠির শেখেরহাট ইউনিয়নের গুয়াটন গ্রামের মোবারেক আলী ফকিরের মালিকানাধীন জমির পাশের সরকারি সড়কের তালগাছটিতে দীর্ঘদিন ধরে বাবুই পাখির নিরাপদ আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত ছিল। এ গাছে অসংখ্য বাবুই পাখির বাসা, ডিম ও ছানা ছিল। জমির পাশে থাকা তাল গাছটি মোবারেক আলী ফকির মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন। তালগাছটি কাটার ফলে প্রায় পাঁচ শতাধিক ছানা ও ডিম ধ্বংস হয়ে যায়। এই বন্যপ্রাণী হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসী মর্মাহত হয়ে পড়েন।
স্থানীরা বলছেন, এই তালগাছটি শুধু একটি গাছ ছিল না, ছিল একটি প্রাণী বৈচিত্রের কেন্দ্র ছিল। যারা এই কাজ করেছে, তারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। সচেতন মহল অবিলম্বে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। ঘটনার পর থেকে অভিযুক্তরা গা ঢাকা দিয়েছে।
স্থানীয় জাহিদ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই তালগাছটি শুধু একটি গাছ ছিল না, ছিল একটি প্রাণী বৈচিত্র্যের কেন্দ্র ছিল। যারা এই কাজ করেছে, তারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে।
এ দিকে স্থানীয় প্রশাসন বা বন বিভাগ এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেয়নি বলে জানা গেছে। তবে সচেতন মহল অবিলম্বে অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে পরিবেশ আইনে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, এ বিষয়টি আমরা জেনে বন কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। এ ব্যাপারে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে মামলা করা হবে।
এ দিকে ঘটনাটি জেনে দুঃখপ্রকাশ করেন বাংলাদেশ বন বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা জোহরা মিলা।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে ১১৭ প্রকার বাবুই পাওয়া গেলেও বাংলাদেশে মাত্র তিন প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা মেলে। যদিও এই তিন প্রজাতির বাবুই পাখির দেখা পাওয়াও এখন দুষ্কর। পরিবেশ বিপর্যয়, নির্বিচার শিকার ইত্যাদি কারণে সুন্দর এই পাখি দেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
জোহরা মিলা বলেন, তালগাছ, নারকেল, খেজুর ইত্যাদি গাছে ঝুলিয়ে বাসা তৈরি করে ‘দেশি বাবুই’ (Baye Weaver)। বরিশাল অঞ্চলে সাধারণত দেশি বাবুইয়ের বাস।
বন বিভাগের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, দেশি বাবুইকে প্রায়ই ফসলে ক্ষেতে দেখা যায়, অনেকে ধারণা করেন পাখিটি ফসল খায়। কিছু ফসল হয়তো খায়ও। কিন্তু ফসলের ক্ষতিকর পোকামাকড়ই তার প্রধান খাদ্য। তাই প্রকৃতপক্ষে কৃষকের ক্ষতির চেয়ে উপকার অনেক বেশি করে।
প্রকৃতির সুন্দর এই পাখিটিকে রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের এক নম্বর তফসিল অনুযায়ী এই পাখিটি সংরক্ষিত। তাই এটি শিকার, হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
উল্লেখ্য, বাবুই পাখি বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য উপকারী ও সংরক্ষিত একটি প্রজাতি। তাদের বাসা তৈরি করার নান্দনিকতা ও সামাজিক আচরণ পৃথিবীব্যাপী প্রশংসিত। এ ধরনের বর্বরতা শুধুমাত্র জীববৈচিত্র্য ধ্বংসই নয় বরং মানবিক মূল্যবোধকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
আরটিভি/এমকে