কেঁচো সারে ভাগ্য বদল নারীদের
প্রথমে রবিশস্য চাষে কেঁচো সারের ব্যবহার শুরু করলেও আস্তে আস্তে সব ধরনের চাষাবাধে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কেঁচো সার বা ভার্মি কম্পোস্ট।
রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে গাজীপুরের কৃষকরা কেঁচো সারের দিকে ঝুঁকছেন। বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তারা। প্রশিক্ষণ নিয়ে কেঁচো সার উৎপাদন করে অর্থ উপার্জন করছেন তারা। গাজীপুর শহর থেকে প্রায় বিশ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে রাজাবাড়ির ইউনিয়নের নিভৃত গ্রাম চিনাশুকানিয়া। এই গ্রামের বেশ কয়েকজন নারী উদ্যোক্তা গত এক বছর যাবত কেঁচো সার উৎপাদন করতে শুরু করেছেন। গ্রামটিকে অনেকেই এখন কেঁচো সার উৎপাদনের গ্রাম হিসেবে চিনেন।
কথা হয় ওই গ্রামের নারী উদ্যোক্তা মাকসুদা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন তিনি। প্রথমে তিনি কৃষি অফিস থেকে কেঁচো আনেন। পরে স্থানীয় খাল-বিল থেকে আধাপঁচা কচুরিপানা এনে ছোট ছোট টুকরা করা হয়। এর সঙ্গে আধাপঁচা কলা গাছ টুকরা করে কেটে মিশানো হয়। পরে তার সঙ্গে আধা শুকনো গোবর মিশিয়ে বস্তায় ভরে ১২ থেকে ১৫দিন রেখে দেন। এর পর মেটারিয়ালগুলো সিমেন্টের তৈরি চাকায় দিয়ে সেখানে কেঁচো ছাড়া হয়।
২০-২২দিনের মধ্যে কেঁচো সারে পরিণত করে মেটারিয়ালগুলো। এই সারগুলোই হলো ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার। শুধু মাকসুদা বেগম, লাভলী কিংবা ফাতেমা খাতুন নয়। বর্তমানে এই গ্রামের প্রায় ৩০-৩৫ জন উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার উৎপাদন করছেন। তাদের দেখে আশপাশের অনেকেই এই সার উৎপাদনে মনোযোগী হচ্ছেন। উদ্যোক্তা ফাতেমা বলেন, ছেলে- মেয়েদের লেখা পড়ার খরচ দিয়ে যাচ্ছি এই সার বিক্রি করে। প্রতি কেজি সার ১০-১২ টাকায় বিক্রি করা যায়। স্থানীয় কৃষকরাই এসব সার কিনে নেয়।
এদিকে এসব জৈব সার ব্যবহার করে রবিশস্যে ব্যাপক ফলন পাওয়া যাচ্ছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। এই গ্রামের কৃষক মো.আব্দুল্লাহ জানান, গত এক বছর ধরে তিনি তার শস্য খেতে রাসায়নিক সার ব্যবহার ছেড়ে দিয়েছেন। বিকল্প হিসাবে প্রাকৃতিক কেঁচো সার ব্যবহার করছেন।
অপর কৃষক মজিবুর রহমান বলেন, এই সারের ব্যবহারে সবজি খেতে শস্য উৎপাদন বেশি হয়। স্বাস্থ্যসম্মত সবজিও পাওয়া যায়।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে,মাটিতে জৈব সার ব্যবহার বাড়ালে মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা বাড়বে। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচো সার মাটিকে নরম করা ও পানি ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন অনুজীবের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। গাছের প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান গ্রহণের আয়নে পরিণত করে জৈব সার। এতে থাকে ৮৮.৩২ ভাগ জৈব পদার্থ, ১.৫৭ ভাগ নাইট্রোজেন, ১.২৬ ভাগ বোরন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম। রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে এই উপাদানগুলোর সবগুলো পরিমাণমতো পাওয়া যায় না। তাছাড়া রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ক্রমেই ভূমির উর্বরতা কমে যেতে থাকে। ফলে এখন থেকেই মাটিতে কেঁচো সার তথা ভার্মি কম্পোস্ট সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
শ্রীপুর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আইরিন সুলতানা আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বর্তমানে শুধু রাজাবাড়িতেই ৩৫ জন কেঁচো সার উৎপাদন করছেন। তারা এগুলো স্থানীয় কৃষি পণ্যের দোকানে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করছেন। একই সঙ্গে জমিতে রাসায়নিকের ব্যবহারও কমছে। প্রতি মাসেই কেঁচো সারের উৎপাদনকারী বাড়ছে। উদ্যোক্তাদের মধ্যে বেশিভাগই নারী। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই এলাকায় সার উৎপাদনকারীরা কেঁচো উৎপাদন করে বিক্রি করতে পারবে। প্রতি কেজি কেঁচোর বাজার মূল্য দুই থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।
গাজীপুর জেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুব আলম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, এনএটিপির-২ প্রকল্পের আওতায় মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে আনার জন্য এ সার উৎপাদনে আগ্রহীদের নিয়ে কাজ করা হয়। জৈব সার উৎপাদনের জন্য গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে কেঁচোসহ সব উপকরণ বিনামূল্যে কৃষকদের দিচ্ছি। বড় পরিসরে কেউ উদ্যোগ নিলেও আমরা তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করব।
আরও পড়ুন
জেবি
মন্তব্য করুন