আজও আছে নকশিকাঁথার গ্রাম
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলমপুর গ্রামের জোবেদা আক্তারের স্বামী হাসপাতালের হিসাবরক্ষক, মেয়ে অর্থনীতিতে এম এ পাশ করেছেন, ছেলে গণিতে এমএসসি করার পর ব্যারিস্টারি পড়তে লন্ডন যাওয়ার চেষ্টা করছেন। স্বাভাবিকভাবেই পরিবারটি আর্থিকভাবে সচ্ছল।
তারপরেও জোবেদা আক্তারের চিন্তা ছিল গ্রামের সহজ-সরল অসহায় স্বামী পরিত্যক্তা দরিদ্র নারীদের কিভাবে স্বাবলম্বী করা যায়।
এমন চিন্তা থেকেই বিএ পাশ করার পর যুব উন্নয়ন থেকে সেলাই প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন তিনি। এরপর গ্রামের বাড়িতে ২০-২৫ জন নারীকে নিয়ে ‘জাগরণী মহিলা সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এই সংগঠনের মাধ্যমেই গ্রামের অন্য নারীদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন জোবেদা আক্তার।
দিন-দিন নারী উদ্যোক্তা জোবেদার এই কার্যক্রমে অনুপ্রাণিত হয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রামের আরও বেকার নারীরা এগিয়ে এলে ১০০ জন নারীকে নিয়ে গড়ে তোলেন ওই সমিতিরই অন্তর্ভুক্ত একটি সংগঠন ‘স্বদেশ প্রীতি’। ওই সংগঠনের মাধ্যমেই নারীদের নকশিকাঁথা সেলাই প্রশিক্ষণ, তৈরি করাসহ বাজারজাত শুরু করেন।
সরেজমিনে উপজেলার আলমপুর, মাহমুদপুর, বানাইচ গ্রামসহ ও অন্যান্য গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নারীরা সংসারের কাজের অবসরে ঘরে বসে তৈরি করছেন আকর্ষণীয় নকশি কাঁথা। সংগঠনের দেওয়া ডিজাইন বা তাদের নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি করা কাঁথাগুলো দেখতেও সৌখিন। সরকারি কোনও প্রশিক্ষণ ছাড়াই কয়েক বছর ধরে তৈরি করছেন নকশি কাঁথা। বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি করা কাঁথাগুলো তারা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিত্তবানসহ বিভিন্ন জেলার ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে বাড়তি আয় করছেন।
মাহমুদপুর গ্রামের আয়েশা খাতুন, ফুলদিঘী গ্রামের মর্জিনা বেগম, বানাইচ গ্রামের জায়েদা খাতুনসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামের নকশিকাঁথা শিল্পীরা জানান, সংসারের কাজের পর বেশ সময় হাতে থাকে। এই সুযোগে নকশিকাঁথা সেলাই করে কিছু টাকা আয় করি। সেই টাকা আমরা ব্যাংকে রাখি। ছেলে-মেয়েদের লেখা পড়া করাই।
প্রতিটি নকশিকাঁথা সেলাই করতে ১৫-২০ দিন সময় লাগে। ডিজাইন বেশি হলে ২-৩ মাসও সময় লাগে। প্রতিটি কাঁথা ডিজাইন অনুপাতে তৈরি করতে এক হাজার থেকে পনেরোশ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়। বিক্রি হয় দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত।
নকশিকাঁথা কিনতে আসা রংপুরের লাইলা বেগম, বগুড়ার নিঝুম আক্তার, নাটোরের পপি জানান, এখানকার নকশিকাঁথা বিভিন্ন ডিজাইনে তৈরি করা হয়। মান অনেক ভালো। এজন্য আমরা দূর থেকে নকশিকাঁথা নিতে এসেছি।
নারী উদ্যোক্তা জোবেদা আক্তার আরটিভি অনলাইনকে জানান, আমার উদ্দেশ্যে হচ্ছে অসহায় নির্যাতিত নারীদের স্বাবলম্বী করা। আমার এই উদ্যোগের পাশাপাশি যদি সরকার, বিভিন্ন বাজারজাতকারী সংগঠন এগিয়ে আসে তাহলে আমরা এই নকশিকাঁথার প্রসার ঘটাতে পারব। নারীরা আরও বেশি স্বাবলম্বী হবে।
জয়পুরহাট জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সাবিনা সুলতানা আরটিভি অনলাইনকে জানান, ক্ষেতলাল উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নারীরা নকশিকাঁথা সেলাই করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। তাদেরকে যদি মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে আরও দক্ষ করতে পারি, তাহলে আয় বাড়বে। সংসারেও সচ্ছলতা ফিরে আসবে।
জেবি
মন্তব্য করুন