• ঢাকা বুধবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১
logo

পোড়া মার্কেটে বহুতল ভবন করতে চায় ডিএনসিসি, ব্যবসায়ীরা চান পুনর্বাসন

রাফিয়া চৌধুরী

  ৩০ মার্চ ২০১৯, ২০:৪০
রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরে ডিএনসিসি মার্কেট সংলগ্ন শনিবার সকালে পুড়ে যাওয়া কাঁচাবাজার; ছবি: আরটিভি অনলাইন

রাজধানীর গুলশান ১ নম্বরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মার্কেট সংলগ্ন কাঁচাবাজার এখন আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। ধ্বংসস্তূপের দৃশ্য দেখে নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীরা। আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে বহু ব্যবসায়ীর স্বপ্ন। জীবন চলার চাকাটা যেন পুড়ে গেছে লেলিহান আগুনে।

তবু এই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা মার্কেটকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চান। অপরদিকে ডিএনসিসি ও মার্কেট কর্তৃপক্ষ এখানে নতুন করে বহুতল ভবন করতে চান। যদিও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী ডিএনসিসি ও মার্কেট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নারাজ। তারা এই মার্কেটেই দ্রুত পুনর্বাসন চান। সরেজমিনে ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

গুলশান চিকেন কর্নারের (দোকান নম্বর ৬৯) মালিক জাকির হোসেন মিয়াজি আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমার দোকান থেকে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে চিকেন মাসরুম সাপ্লাই দিতাম। ২০১৭ সালের আগুনে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। তখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। এবার দশ থেকে পনেরো লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন মার্কেট কর্তৃপক্ষ ও মেয়র মহোদয় যদি মার্কেট নতুন করে বানাতে চায়, সেটা অবশ্যই আমাদের জন্য ভালো। কিন্তু পাকা মার্কেট তৈরি করতে যে সময় লাগবে, এই সময় আমরা কী করবো? আমাদের জীবন কিভাবে চালাবো।’

আগুন নেভানোর পর বাজার ঘুরে দেখছে ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা; ছবি: আরটিভি অনলাইন

‘আমাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তার থেকেও জরুরি আমাদের পুনর্বাসন। কারণ আমাদের ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার একমাত্র উপায় এই ব্যবসা। সামনে রমজান মাস। রমজান মাসে আমাদের অনেক ব্যবসা হয়। এই সময় আমরা কিছু টাকা পয়সা ইনকাম করি। এছাড়া এই মার্কেটটি আন্তর্জাতিকভাবে বেশ পরিচিত।’

আগুন লাগা নিয়ে ওই ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘উঁচু ভবনেওতো আগুন লাগতে পারে। তাই মার্কেটে আমাদের দ্রুত বসতে দেওয়ার ব্যবস্থা করলে সেটাই আমাদের জন্য বেশি লাভজনক হবে।’

তারই কথার সঙ্গে সুর মিলিয়ে মিজান চিকেন হাউজের (দোকান নম্বর ১৩৯) মালিক মিজানুর রহমান আরটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এর আগেও মার্কেটে আগুন লেগে আমি সর্বস্বান্ত হয়েছি। তখনও কোনও ক্ষতিপূরণ পাইনি। এবারও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশা করছি না। কিন্তু মার্কেটে আমরা দ্রুত বসতে চাই। এর আগের মেয়র আমাদের দ্রুত তাবু দিয়ে বসানোর ব্যবস্থা করেছিলেন। পরে আমরা মালিক সমিতির সাথে মিলে এই টিনশেড ছাউনির ব্যবস্থা করেছি। নিজেদের টাকায় এই টিনশেড ছাউনি দিয়ে ব্যবসা শুরু করছিলাম। আমরা অল্প পুঁজি নিয়ে হলেও ব্যবসা শুরু করতে চাই। আগেরবার আগুনে পুড়ে তিন কোটি টাকার মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলাম। এবার আগুনে আমার ছয়টি দোকান পুড়ে গেছে। দুটি দোকান ফুড আইটেমের আর চারটি ক্রোকারিজের।’

কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, এ মার্কেটটি এখন ধ্বংসস্তূপ। সবদিকে শুধু পুড়ে যাওয়া পণ্যের ছাই। কোনও কিছুই অবশিষ্ট নেই দোকানের। আবার কোনও দোকানের সামনে পড়ে আছে আলু, পেঁয়াজ। পুড়েছে ফ্রিজে থাকা মাছ, মুরগিও। কেউ সর্বস্ব হারিয়ে নির্বাক হয়ে দোকানের সামনে বসে আছেন। আর কেউ শুধু বিলাপ করছেন।

মো. রিপন নামের এক ব্যবসায়ী জানান, এ দোকানই ছিল তার সব সম্বল। পাইকারি মশলা বাজারজাত করতেন তিনি। সারা দেশের ব্যবসায়ীদের কাছে পাইকারি পণ্য বিক্রি করতেন। অনেক ব্যবসায়ীর কাছে বড় অংকের টাকা পাওনা রয়েছে। কিন্তু সব হিসেবের খাতা পুড়ে ছাই। দোকানে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

জিয়া জেনারেল স্টোরের মালিক ইমন বলেন, ‘আমার দোকানে সব বিদেশি চকলেট পুড়ে গেছে। বাদাম পেস্তা ছাড়াও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বাদাম ছিল। দোকানে থাকা প্রায় ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে। আর ক্যাশে ছিল দুই লাখ টাকার মতো। সব পুড়ে গেছে।’

একাধিক ব্যবসায়ী জানান, দুই বছর আগে আগুনে সর্বস্ব হারিয়ে নতুন করে স্বপ্ন দেখেছিলেন তারা। নানা প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে স্বপ্নের পসরা সাজিয়েছিলেন। সেই স্বপ্ন আবার পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

ডিএনসিসি মার্কেট সংলগ্ন কাঁচাবাজারের আগুন নেভাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস; ছবি: আরটিভি অনলাইন

দেখা গেছে, গুলশান থানার পক্ষ থেকে একটি সেল খোলা হয়েছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তালিকা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু বকর সিদ্দিক আরটিভি অনলাইনকে বলেন, গুলশান কাঁচাবাজারে ২১২টি দোকান পুড়ে গেছে। গুলশান শপিং সেন্টারের তিনতলায়ও আগুন লেগেছে। সেখানে সাত থেকে আটটি দোকান পুড়েছে। প্রায় ৮৫ জন দোকান মালিক তাদের ক্ষতির হিসেব দিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির হিসেব পাওয়া গেছে।

আজ শনিবার অগ্নিদগ্ধ মার্কেট পরিদর্শনের পর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ডিএনসিসি মার্কেট যেকোনও মূল্যে ভেঙে ওই জায়গায় আন্তর্জাতিকমানের শপিংমল গড়ে তোলা হবে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির এই মার্কেটটি নিয়ে মামলার জটিলতা আছে। এ কারণে এখানে স্থায়ী মার্কেট করা যাচ্ছে না। আমরা দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করে স্থায়ী মার্কেটের দিকে যাব। যেখানে অগ্নি নির্বাপণের যাবতীয় ব্যবস্থা থাকবে।

আরসি/পি

মন্তব্য করুন

rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাকার সাবেক মেয়র আতিক গ্রেপ্তার
ফতুল্লায় বহুতল ভবন থেকে পড়ে নির্মাণশ্রমিক নিহত
শাহজালাল বিমানবন্দরের দেড় কিলোমিটার ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা
বেসরকারি বাজার প্রতিষ্ঠা করবে ডিএনসিসি