ডুবোচর খননে পদ্মার গতিপথ পরিবর্তন, কমছে ভাঙন
শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে ভাঙছে শরীয়তপুরের পদ্মা তীরবর্তী এলাকা। ২০১৮ সাল পর্যন্ত পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ২০ হাজারেরও বেশি পরিবারের বাড়ি-ঘরসহ হাসপাতাল, ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, খাল-বিল, জলাশয় ও অসংখ্য কাঁচা-পাকা স্থাপনা।
তবে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বেঙ্গল গ্রুপের সুদক্ষ পরিচালনায় সব হারানোদের নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস যোগাচ্ছে পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধ। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে ৪৫ শতাংশ ডুবোচর খননের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় নতুন মাত্রা পেয়েছে ভাঙন রোধের কাজ।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম জানিয়েছেন, নদী খননের মাধ্যমে নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হওয়ায় দীর্ঘদিনের ভাঙন আতঙ্ক কেটে স্বস্তি ফিরেছে শরীয়তপুরের পদ্মাপাড়ের মানুষের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভয়াবহ ভাঙন ছিল শরীয়তপুরের নড়িয়া-জাজিরায়। ২০১৮ সাল পর্যন্ত পদ্মার ভাঙনের কবলে পড়েছে ২০ হাজারেরও অধিক পরিবার। বিলীন হয়েছে বহুতল ভবন, বাড়ি-ঘর, হাট-বাজার, ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট, স্কুল, হাসপাতাল, ক্লিনিক, কলেজ, মসজিদ-মন্দির ও কাঁচা-পাকা স্থাপনাসহ বিভিন্ন সামাজিক প্রতিষ্ঠান।
পদ্মার ভাঙন রোধে ২০১৮ সালে ১ হাজার ৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে বাঁধের ৪২ শতাংশ ও চর অপসারণের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছে বেঙ্গল গ্রুপ। এতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫ শতাংশ ডুবোচর অপসারণের ফলে রক্ষা বাঁধ পেয়েছে নতুন মাত্রা।
বেঙ্গল গ্রুপের পিডি মেজর (অব.) মৃধা রেজাউল করিম বলেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এর দেয়া সময়সীমার মধ্যেই লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত নদী খনন ও ব্লক এবং জিওব্যাগ ডাম্পিং দক্ষতার সঙ্গে শেষ করে কাজের অগ্রগতি বাড়িয়ে কাজ করে যাচ্ছে বেঙ্গল গ্রুপ।
তাই আসছে বর্ষা মৌসুমে শরীয়তপুরবাসীকে নদী ভাঙনের হাত থেকে পুরোপুরি রক্ষায় ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে বাঁধের ৪২ শতাংশ ও চর অপসারণের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছে বেঙ্গল গ্রুপ। তবে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৪৫ শতাংশ ডুবোচর অপসারণের ফলে রক্ষা বাঁধ পেয়েছে নতুন মাত্রা।
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম আহসান হাবিব বলেন, পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে নড়িয়া-জাজিরার মানুষকে রক্ষা করতে পদ্মার ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এবছর পদ্মার বাম তীরে ড্রেজিং করে ডুবোচর কেটে আমরা একটি চ্যানেল তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি।
তাই এ বছর নদীর স্রোত মাঝ নদীতে চলে গেছে। এতে করে স্থায়ী বাঁধে ভাঙন ঝুঁকি অনেকাংশে কমেছে। আশা করি আসছে বর্ষা মৌসুমে মূল বেড়িবাঁধ ভাঙনের কোনো শঙ্কা নেই। আশা করছি এ বছর আমরা নড়িয়া ও জাজিরাবাসীকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবো।
পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, সারা দেশে চলমান করোনা মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ড নড়িয়া-জাজিরাবাসীকে নদী ভাঙনের হাত থেকে রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২১ সালের জুন মাসের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে বাঁধের ৪২ শতাংশ ও চর অপসারণের ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ করেছে বেঙ্গল গ্রুপ।
এজে/পি
মন্তব্য করুন