রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গতকাল শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিক্ষোভ সমাবেশের শেষের দিকে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় পুলিশের ওপর হামলা হয়েছে উল্লেখ করে শনিবার রাতেই বিএনপির ৩০১ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২ টি মামলা রুজু করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) শাহবাগ ও রমনা মডেল থানার পুলিশ সূত্রে আজ রোববার এ তথ্য জানা গেছে। দুটি মামলাতেই পুলিশ বাদি হয়েছে।
জানা গেছে, রাজধানীর শাহবাগ থানার মামলায় ২৯ জনকে এজহারনামীয় আসামি করে অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলাটি করেছেন থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. গোলাপ উদ্দিন মাহমুদ। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হামলার ঘটনায় মো. শরীফ হোসেন নামের ১ বিএনপির নেতাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, রমনা মডেল থানায় একই ঘটনায় আরেকটি মামলা রুজু করা হয়েছে। ওই মামলায় ৩২ জনকে এজহারনামীয় আসামি করে ১০০ থেকে ১২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। এ মামলার বাদি উপ-পরিদর্শক (এসআই) শহিদুল উসমান মাসুম। দুই থানায় ৩৪, ১০৯, ১৪৩, ১৪৭, ১৪৯, ১৮৬, ৩৩২, ৩৫৩, ৪২৭ ধারার দ্রুত বিচার আইনে মামলা ২টি দায়ের করা হয়েছে।
এসআই শহিদুল উসমান মাসুম বলেন, গতকাল শনিবার রাতে হওয়া এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৩ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। গ্রেপ্তার করা আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) সাজ্জাদুর রহমান বলেছিলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি ছিল। এ সময় তারা দায়িত্বরত পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে লাঠিপেটা করে।
গতকাল বিকেলে রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেছিলেন, পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও হামলার ঘটনায় ৮ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তারা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন নিজেদের মতো করে।
শেখ মোহাম্মদ শামীম বলেছিলেন, রমনা ও শাহবাগ থানা মিলে প্রায় ৪০ জনকে পুলিশ আটক করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধ প্রমাণিত না হলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হবে। আর যাদের অপরাধ প্রমাণিত হবে, তাদের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
জানা যায়, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্রীয় খেতাব ‘বীর উত্তম’ বাতিলের উদ্যোগের প্রতিবাদে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি খন্দকার মোশাররফের বক্তব্য চলাকালে পুলিশ তাদের ধাওয়া দেয়। পরিস্থিতি সামলাতে দলটির নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। গতকাল শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়ো হতে শুরু করেন। পরে দুপুরের দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের শেষদিকে হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীরা হট্টগোল শুরু করলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। ছত্রভঙ্গ হয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রেসক্লাবের ভেতরে ঢুকে পড়ার চেষ্টা করেন। পরে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন। অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে সংঘর্ষ চলার পর সেখান থেকে সরে যান বিএনপির নেতাকর্মীরা। এ সময় ছাত্রদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমিনুর রহমান আমিনসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি।
কেএফ