গাড়ি চুরির অভিনব কৌশলের তথ্য উদঘাটিত হয়েছে। জানা গেছে, কেমন করে নকল চাবির ক্যারিশমায় সড়ক থেকে গাড়ি নিয়ে উধাও হয়ে যেতো চতুর চোর চক্র। ২-৩ জনে বিভক্ত হয়ে শহরের রাজপথে ঘুরে বেড়াতো তারা, কোনো গাড়ি টার্গেট করা হয়ে গেলেই তারা সুযোগ বুঝে গাড়ির নিয়ে ঝটপট উদাও হয়ে যেতো। নিপুণভাবে নকল চাবি ব্যবহারের তাদের রয়েছে বিশেষ দক্ষতা।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে এমনই একটি চক্রের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযানে তাদের কাছ থেকে ৮টি চোরাই গাড়ি জব্দ করেছে তারা।
জানা গেছে, ডিবি পুলিশের মিরপুর বিভাগের সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ,গাড়ী চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। আজ রোববার (২১ মার্চ) ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ইফতেখারুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃতদের নাম- নূরুল হক, আব্দুল আলিম ওরফে ইমন, মো. হৃদয় পাঠান ওরফে উজ্জ্বল পাঠান এবং এ এইচ রুবেল। তাদের কাছ থেকে ৮ টি চোরাইকৃত প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস জব্দ করেছে পুলিশ।
তথ্য মতে, সম্প্রতি রাজধানীর কাফরুল থানা, গুলশান থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানা এলাকায় গাড়ি চুরি করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মিরপুর বিআরটিএ অফিসের রাস্তার বিপরীত পাশে থাকা একটি প্রাইভেট কার চুরির ঘটনায় গত ২১ জানুয়ারি কাফরুল থানায় মামলা হয়। পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগের সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম উক্ত মামলার তদন্ত শুরু করে।
সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ,গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিমের সহকারী পুলিশ কমিশনার মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে নকল চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এই চক্রের সদস্যদের সনাক্ত করা হয়। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি চোরাই প্রাইভেটকারসহ নূরুল হক (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্য মতে গত ১২ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানা এলাকা থেকে ১ টি চোরাই প্রাইভেটকার ও ১ টি মাইক্রোবাসসহ আব্দুল আলিম ওরফে ইমনকে (৩৩) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৬ মার্চ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর থানা এলাকা থেকে মোঃ হৃদয় পাঠান ওরফে উজ্জ্বল পাঠান (২৯) ও এ এইচ রুবেলকে (৩৭) গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫ টি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে অপরাধের কৌশল সম্পর্কে ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এ চক্রের সদস্যরা বেশ কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গাড়ি চুরির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। এ চক্রের ২/৩ জনের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে টার্গেট গাড়ি খুঁজতে থাকে। টার্গেটকৃত গাড়ি পেলে সময় ও সুযোগ বুঝে কয়েক মূহুর্তের ব্যবধানে নকল চাবি দিয়ে গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে ছুটে যায় নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, পূর্বাচল বা কাচঁপুর ব্রীজের দিকে। সামনে ও পেছনে বাইক বা অন্য কোন গাড়িতে থাকে এ চক্রের বাকি সদস্যরা। সেখান থেকে তাদের একজন দক্ষ ড্রাইভার গাড়িটি পৌঁছে দেয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ বা মৌলভীবাজারের চোরাই গাড়ি বিক্রির সিন্ডিকেটের নিকট। সেখান থেকে অন্য ড্রাইভার দ্বারা গাড়িটি চলে যায় সীমান্তবর্তী দুর্গম এলাকায়। বিআরটিএ এর সীল স্বাক্ষর জাল করে গাড়ির নকল কাগজপত্র তৈরি করা হয়। মূল মালিকের নামের সাথে মিল রেখে তৈরি করা হয় নকল দলিল অথবা আদালতের স্বাক্ষর সম্বলিত নিলামের নকল কাগজপত্র। সহজ সরল লোকদের ভুলিয়ে ভালিয়ে তাদের নিকট অনেকটা কম মূল্যে গাড়িটি বিক্রি করে দেয়।
এসব চক্রের সদস্যরা কিছু কিছু গাড়ি দিয়ে সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ইয়াবা ট্যাবলেট, ফেনসিডিল ও গাঁজা বহন করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয় বলে জানিয়েছে ডিবি।
কেএফ