ডলারের দাম বাড়ায় ঝুঁকিতে ব্যাংক
দেশে ডলারের তীব্র সংকট ও টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঝুঁকি বেড়েছে। একদিকে ব্যাংকে ডলারের যোগান কম, অপরদিকে আমদানি ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের বিপরীতে ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে বেড়েছে বিনিময় হারের ঝুঁকি।
আগে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় বাড়ায় ডলারের প্রবাহ বেশি ছিল। ফলে ব্যাংকগুলোয় অতিরিক্ত তারল্যের প্রবাহ ছিল। মূলধন ঝুঁকিও কম ছিল। এসবের পাশাপাশি এখন বেড়েছে মূলধন ঝুঁকিও।
রোববার (১৩ আগস্ট) প্রকাশিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ডলার সংকট ও ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হারের দিক থেকে শীর্ষ ৫ ব্যাংক ৪৩ দশমিক ৮১ শতাংশ ঝুঁকিতে আছে।
ফলে পুরো বাজারে ঝুঁকি রয়েছে ১২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। শীর্ষ ১০ ব্যাংকের বিনিময় হারের ঝুঁকি ৬৮ শতাংশ। বাজারের ওপর ঝুঁকি রয়েছে ২০ শতাংশ। বাকি ব্যাংক শতভাগ ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে মার্কেটে ঝুঁকি রয়েছে সাড়ে ২৯ শতাংশ।
অর্থাৎ শুধু অস্বাভাবিক বিনিময় হারের কারণে ব্যাংকের ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। সার্বিকভাবে ঝুঁকির মাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ০১ শতাংশ। ব্যাংকের মোট সম্পদের বিপরীতে ওই হারে ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে।
বিনিময় হারের চাপে ব্যাংকের মূলধন চার্জ (ঝুঁকির বিপরীতে সংরক্ষিত মূলধনের পরিমাণ) ১ হাজার ৬০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ১ হাজার ৩৬০ কোটি টাকা বেড়েছে। এক বছরের ব্যবধানে ৩০০ কোটি টাকা বেড়েছে ব্যাংকের মূলধন চার্জ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক সংকট ও ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিনিময় হারে বাড়তি চাপের সৃষ্টি হয়। আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের ডলারের চাহিদা বাড়ে। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহে নিুগতির কারণে ডলার আয় কমে যায়।
ফলে ব্যাংকগুলো বৈদেশিক দায়দেনা মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে দ্বারস্থ হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারের চাহিদা মেটাতে গিয়ে তারল্যের একটি অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চলে যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন বিলের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে তারল্যের জোগান দিয়েছে। ফলে ২০২২ সালে মানি মার্কেটে কোনো পদ্ধতিগত তারল্যের চাপের সম্মুখীন হয়নি। ওই বছরে বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, স্পেশাল রেপো এবং লিকুইডিটি সাপোর্ট ফ্যাসিলিটির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোকে ব্যাপকভাবে তারল্যের জোগান দিয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈশ্বিক মন্দার ঢেউ বাংলাদেশেও বেশ ভালোভাবেই এসেছে। এর প্রভাবে ঋণের সুদের হার বাড়াতে হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোয় ঝুঁকির মাত্রাও বেড়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে মূলধন ঝুঁকির মাত্রা। ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বাড়ায় ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে।
এর বিপরীতে প্রভিশন রাখার বাধ্যবাধকতাও বাড়ছে। ফলে ব্যাংকগুলোর পুঁজি ও রিজার্ভ বা সংরক্ষিত তহবিলের একটি অংশ নন পারফর্মিং সম্পদে (যে সম্পদ থেকে কোনো আয় আসে না) পরিণত হচ্ছে, যা ব্যাংকগুলোর জন্য ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক স্থানীয় এবং আন্তর্দেশীয় দুই ক্ষেত্রেই সাইবার নিরাপত্তার হুমকি পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। এতে লেনদেনের মাত্রা এবং যথাযথ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের শেষ পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে সম্পদ, দায় এবং আনুষঙ্গিক দায়, বৈদেশিক মুদ্রার খাতে আয় আগের বছরের তুলনায় কমেছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে ডলারের দাম বৃদ্ধি ও আমদানি ব্যয় বাড়ায় রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে। ফলে রিজার্ভ নিুমুখী হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ডলারের দাম ২০২১ সালের শেষদিকের ৮৫ টাকা, ২০২২ সালের শেষদিকে তা বেড়ে হয়েছে ১০৪ টাকা। চলতি বছর তা আরও বেড়ে হয়েছে ১০৯ টাকা।
মন্তব্য করুন