ঢাকামঙ্গলবার, ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রিসাইক্লিংয়ের বাইরে এক তৃতীয়াংশ প্লাস্টিক বর্জ্য

মিথুন চৌধুরী

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭ , ১১:০৯ এএম


loading/img

নিম্ন শ্রেণির মানুষের উপার্জনের অন্যতম অবলম্বন পরিত্যক্ত পানির বোতল, কোমল পানীয়র বোতল, ওষুধের কৌটাসহ বিভিন্ন প্লাস্টিক সামগ্রী। আর তাদের কাছ থেকে পাওয়া এসব পরিত্যক্ত সামগ্রী ব্যবসায়ীরা রিসাইক্লিং(পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ) করে বিক্রি করছেন দেশে-বিদেশে। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনার কারণে দেশের এক তৃতীয়াংশ প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইক্লিংয়ের আওতার বাইরে থেকে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকগুলো রিসাইক্লিং করতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, কুমিল্লা, রাজশাহী ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন শহরে মোট ৫ হাজার কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ছোট কারখানার সংখ্যা ৩ হাজার ৫০০, মধ্যম ১ হাজার ৪৮০ ও বড় আকারের ২০টি। ব্যবসায়ীরা প্লাস্টিক সামগ্রীগুলোকে আধুনিক মেশিনের মাধ্যমে দানায় রুপান্তর করে বিদেশে রপ্তানি করছে। প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক দানা উৎপন্ন হচ্ছে। যার সিংহভাগ ক্রেতা দেশীয়। এর বাজারমূল্য প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা। যা আমদানি করতে প্রায় দিগুণ খরচ পড়তো। অপরদিকে দেশের চাহিদা মিটিয়ে অবশিষ্ট দানা বিদেশে রপ্তানি করে আয় করছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

২০০০ সালের দিকে গড়ে ওঠা এ শিল্পে বর্তমানে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে প্রায় ৩ লাখ লোক জড়িত রয়েছে। কম পুঁজিতে ভালো লাভ হওয়ায় অনেকেই এ ব্যবসায় এগিয়ে আসছেন।

দেশের কয়েকটি কারখানা আমদানিকৃত ও রিসাইক্লিং দানা ব্যবহার করে তৈরি করছে বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, কৃষি সামগ্রীর মোড়ক, ইলেকট্রনিক্স ও বিল্ডিং সামগ্রী, পরিবহন যন্ত্রাংশ ও ফার্নিচারসহ নানা ধরনের গৃহস্থালি সামগ্রী।

বর্তমানে বাংলাদেশে মাথাপিছু ৫ থেকে ৬ কেজি প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হচ্ছে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ১শ’ কেজি, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ১শ’ ২০ আর সিঙ্গাপুরে প্রায় ১শ’৩০ কেজি এসব পণ্য ব্যবহৃত হয়।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশের কারখানাগুলোতে বছরে ৪০ লাখ টন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন হয়। যা ব্যবহার শেষে বর্জ্যে পরিণত হয়। এছাড়া কারখানাগুলোর উৎপাদন প্রক্রিয়ায়ও বেশকিছু প্লাস্টিক বর্জ্যের সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে দেশে প্রতি বছর প্রায় ১১ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্যে পরিণত হয়। কিন্তু এর মধ্যে রিসাইক্লিং হয় মাত্র ৩ লাখ ২৭ হাজার টন। যা মোট বর্জ্যের ২৮ শতাংশ।

বিজ্ঞাপন

শুধু ঢাকায় প্রতিদিন ৩৮১ দশমিক ৩৬ টন প্লাস্টিক বর্জ্য তৈরি হয়। যা ১ বছরে দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার টন। এর মধ্যে রিসাইক্লিং প্রক্রিয়ায় রয়েছে ৫২ হাজার ২৭৯ টন। যা শহরের মোট বর্জ্যের ৩৮ শতাংশ। এতে বছরে প্লাস্টিক পণ্য আমদানি বাবদ ৫৫৫ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবার পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের ডাম্পিং খরচ কমে ১৩ কোটি টাকা। যদি সঠিকভাবে প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহার করা হয় তাহলে ৮৬ হাজার ৯১৭ টন বর্জ্য পণ্যে রূপান্তর করা যাবে। সাশ্রয় হবে ৭০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা।

এদিকে, রিসাইক্লিং শিল্পে কর মওকুফ সুবিধা দিয়েছে সরকার। এক অঙ্কের সুদে ঋণ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে দেশের সব ব্যাংক। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে নগদ অর্থসহায়তাসহ নানা প্রণোদনা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা কৌশলের (ইএমএস) যথাযথ বাস্তবায়ন হলে প্লাস্টিক কোনো ক্ষতির কারণ হবে না; বরং রিসাইক্লিং বিপুল অর্থ সাশ্রয় করতে পারে। মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবহারও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।  রিসাইক্লিংয়ের কারণে বর্তমানে প্রতি বছর ডিসিসি এলাকায় বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হচ্ছে। ফলে প্লাস্টিক আমদানি হ্রাস পাওয়া ছাড়াও মহানগরীতে ৩০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

তারা আরো বলেন, রিসাইক্লিং করার ফলে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ ও পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাওয়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রতি বছর ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। রিসাইক্লিংয়ের ফলে দুই-তৃতীয়াংশ জ্বালানি সাশ্রয়, পরিবেশ দূষণ ও পানি ব্যবহার ৯০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। তবে সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে ভবিষ্যতে ভাগাড়েই পড়ে থাকবে প্লাস্টিক বর্জ্য। আর সঠিক সচেতনতা ও সু-ব্যবস্থাপনা করা হলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে দেশ। 

এমসি/ডিএইচ

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |