প্রতিটি বর্ণের ইতিহাস রয়েছে। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যায় অনেক ভাষা। তবে অনেক জাতি ভাষা ধরে রাখতে সবচেষ্টা করেও হাল ছেড়ে দেয়। কিন্তু একটু ভিন্ন বাঙালিরা। বাংলা ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্তে ভিজিয়ে দিয়েছিল রাজপথ। আর সেসময়ের ভাষা আন্দোলনে যারা সরাসরি জড়িত ছিলেন অনেকেই পরলোকগমন করেছেন। অনেকে এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে যাচ্ছেন। ভাষা আন্দোলনে মাতৃভাষা বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে মৃ্ত্যুকে পরোয়া না করে রাজপথে দাঁড়িয়েছিলেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের পাবলিক রিলেশন অফিসার আবু বাকের।
সরকারি চাকরি করেও নানান ভয় ও চিন্তা দমাতে পারেনি তার আন্দোলনকে। অফিস করে ভাষার জন্য ছুটে বেড়িয়েছেন ঢাকার রাজপথে। লুকিয়ে লুকিয়ে লাগিয়েছেন পোস্টার। দেয়ালে দেয়ালে লিখে করেছেন আন্দোলন। পড়েছেন পুলিশের লাঠিচার্জেও। পুরান ঢাকায় পাঠাগার কেন্দ্রিক ঐক্য গড়ার কার্যক্রম চালিয়েছেন। হাসপাতালের বিছানায় আরটিভি অনলাইনকে এমনটাই জানালেন আবু বাকের।
মূলত ১৯৪৯ সাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে প্রথম সফল গণআন্দোলনের স্মৃতি ধরে রাখার লক্ষ্যে “রাষ্ট্রভাষা দিবস” পালিত হয়। ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন ঢাকা সফরে এসে পল্টনের এক জনসভায় বক্তৃতার এক পর্যায়ে ঘোষণা করেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। যা ছিলো মূলত জিন্নাহ্ কথারই পুনরুক্তি। নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২৯ জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করে। ১৯৫২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার লাইব্রেরি হলের সভায় মাওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের "সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ" গঠিত হয়। পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে। ঘটনার প্রেক্ষিতে সরকার ২০ ফেব্রুয়ারি এক মাসের জন্য সব সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ঐদিন রাতেই সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এসে জড়ো হয়ে ১৪৪ ধারা জারির বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পুলিশ তাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে। বেলা ২টার দিকে আইন পরিষদের সদস্যরা আইনসভায় যোগ দিতে এলে ছাত্ররা তাদের বাধা দেন এবং সভায় তাদের দাবি উত্থাপনের দাবি জানান। এর মধ্যে কিছু ছাত্র সিদ্ধান্ত নেন তারা আইন সভায় গিয়ে তাদের দাবি উত্থাপন করবেন। ছাত্ররা আইনসভার দিকে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ ছাত্রদের ওপর গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে আব্দুল জব্বার এবং রফিক উদ্দিন আহমেদ ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ২২ ফেব্রুয়ারি নবাবপুর রোডের বিশাল মিছিলে পুলিশের গুলিতে শফিউর রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। আর ধারাবাহিক এই আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আবু বাকের, অকুতোভয় একজন সৈনিকের নাম।
এমসি/এএইচ