ঢাকাবুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১

ইবির মেডিকেল সেন্টারে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মীর তাণ্ডব!

ইবি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ১১ জুলাই ২০২৩ , ০২:২৪ পিএম


loading/img

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) মেডিকেল সেন্টারে তাণ্ডব চালিয়েছে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মী কাব্য ও তার সহকারীরা। 

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার (১০ জুলাই) রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে তারা ভাঙচুর করে। তার অন্য দুই সহকারী হলেন, একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সালমান আজিজ ও আতিক আরমান। এর আগেও মহাসড়কে ছিনতাইয়ের অভিযোগে কাব্যকে আটক করে পুলিশ। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাত ১০টার দিকে বুকে ব্যথার চিকিৎসা নিতে রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন। পরে চিকিৎসা কেন্দ্রের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. ওয়াহিদুল হাসান তাকে ব্যথার ইনজেকশন দিলে কাব্য চলে যান। কিন্তু এর ঠিক আধঘণ্টা পর আবারও কাব্য ও তার সহযোগীরা চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন এবং কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স সহায়তা চান। পরে চিকিৎসক ছাত্র সংশ্লিষ্ট ঘটনা দেখে তাকে কুষ্টিয়া পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তবে অ্যাম্বুলেন্স দিতে কিছুটা দেরি হওয়ায় চিকিৎসা কেন্দ্রের জরুরি বিভাগে ভাঙচুর করেন রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য। পরে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে কুষ্টিয়া পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

এদিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম ও প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম সেলিম প্রশাসন ভবনের সামনে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের সঙ্গেও কাব্য অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। একপর্যায়ে রাত ১২টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।

আব্দুস সালাম সেলিম বলেন, মেডিকেলে কাব্য জোর করে ডাক্তারের রেফার্ড নিয়েছিল। তাই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যাওয়ার সময় প্রশাসন ভবনের দিকে আমরা তাকে বাধা দিলে আমাদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী প্যাথলজি চিকিৎসক জাহাঙ্গীর বলেন, তিনি (কাব্য) এসে দেওয়ালে লাথি দেওয়া ও অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকেন। পরে তাকে অসুস্থতার জন্য ইনজেকশন দেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসককে কুষ্টিয়া পাঠাতে জোর করেন। এতে একটু সময় লাগায় তিনি ভাঙচুর করতে থাকেন। পরে জোরাজুরির ফলে তাকে ড্রাইভার মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামানের সঙ্গে কুষ্টিয়ায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান ডা. ওয়াহিদুল হাসান।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার মোহাম্মদ শাহিনুজ্জামান বলেন, আমাকে তিনি (কাব্য) ফোন দিয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে বলে এবং পরিচয় জানতে চাইলে হুমকি দিতে থাকে। পরে খোঁজাখুঁজি করে তাকে ক্যাম্পাসের বাইরে বি এম এস ছাত্রাবাসের পাশে ঘাসে শুয়ে থাকা অবস্থায় পাই। এতে মেডিকেলে নিয়ে আসার পর ডাক্তার তাকে ইনজেকশন দেন। কিন্ত সেবা দেওয়ার পর কেন্দ্রেই বসে থাকেন ও কুষ্টিয়া যেতে চান। কিন্ত প্রক্টরিয়াল বডি অনুমতি না দেওয়ায় আমি গাড়ি দিতে রাজি না হলে, আমাকে শার্টে ধরে মারধর করে।

ডা. ওয়াহিদুল হাসান বলেন, ঘটনার দেড় ঘণ্টা আগে বুকের ব্যথার চিকিৎসা নিতে আসে কাব্য। তাকে প্রাথমিকভাবে প্রথমে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। তবে এর আধঘণ্টা পর আবার এসে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে কুষ্টিয়া শহরে গিয়ে চিকিৎসা নিতে চান কাব্য। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স কেন দ্রুত দেওয়া হচ্ছে না, এই নিয়ে ভাঙচুর চালান এবং অ্যাম্বুলেন্স চালকের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেন কাব্য।

এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে প্রো-ভিসি, ট্রেজারার, প্রক্টরসহ অনেকেই এসেছিলেন। আমরা রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিচ্ছি। তারপর প্রশাসন যা ব্যবস্থা নেওয়ার নেবে।

চিকিৎসা কেন্দ্রে ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রেজওয়ান সিদ্দিকী কাব্য। তিনি বলেন, প্রচণ্ড বুকের ব্যথা নিয়ে গেলেও ডাক্তার আমাকে গুরুত্ব দিচ্ছিল না। তিনি চেম্বারে শুয়ে ছিলেন। পরে হাত-মুখ ধুয়ে আসতে দেরি করায় আমার পায়ে ধাক্কা লেগে টেবিল-চেয়ার পড়ে যায়।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, আমি মঙ্গলবার সকালেই চিকিৎসা কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। পরে উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার স্যারও এসে দেখে গেছেন। এরপর ইবি থানার ওসিকে জানানো হলে, তিনি পুলিশ পাঠিয়ে তদন্ত করছেন। 

তিনি আরও বলেন, মেডিকেল কর্তৃপক্ষকে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

উল্লেখ্য, গতবছর ১৮ জুলাই রাতে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়কে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায় কাব্য। ড্রাইভারকে ছুরি দেখিয়ে দশ হাজার টাকা দাবি করেন তিনি। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ড্রাইভার ও তার সহকারীকে মারধর করে মানিব্যাগ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নেন তারা। পরে এই ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারের সামনে সাংবাদিকদের হত্যার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্রসহ মহড়া দেন কাব্য। পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে তাকে। এদিকে এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কারও হন কাব্য। এ ছাড়াও ছাত্রলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |