বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আধুনিক কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও জীবাশ্মসম্পদের দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে চতুর্থ কৃষিবিপ্লব বাস্তবায়ন করা প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে দেশে প্রথমবারের মতো ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি অ্যান্ড বায়ো রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম কনফারেন্স হলে ওই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি অ্যান্ড বায়ো রিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই) এবং বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ যৌথভাবে ওই সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষিকে স্মার্ট কৃষিতে রূপান্তরের পাশাপাশি লাভজনক কৃষি ও টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিতকরণ।
সম্মেলনের আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান এবং প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া।
এছাড়াও গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) প্রতিনিধি ড. জিয়াওকুন শি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. নাজমুন নাহার করিম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ, এসিআই মোটরস লিমিটেডের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর (ডিএমডি) জনাব সুব্রত রঞ্জন দাস। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, জাপান, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৪০ জন বিজ্ঞানী, কৃষি প্রকৌশলী, নীতিনির্ধারক, উদ্যোক্তা, কৃষক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীও এই সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সদস্য সচিব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আশিক-ই-রব্বানী।
এ সময় বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা এখন যান্ত্রিকীকরণের যুগে প্রবেশ করেছি। উন্নত দেশগুলো অনেক আগেই এ পথে এগিয়েছে, আর বাংলাদেশও সেই বিশ্বব্যাপী প্রবণতাকে অনুসরণ করছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ শুধু সুযোগ নয়, বরং একান্ত প্রয়োজনীয়। এটি উৎপাদনকে কার্যকর ও লাভজনক করার পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই কৃষি নিশ্চিত করবে। ফসল উৎপাদন, প্রাণিসম্পদ, গ্রামীণ উন্নয়ন ও মৎস্য খাতেও যান্ত্রিকীকরণ অপরিহার্য। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে দ্রুত ফলন বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে। তবে এটি কিছু মানুষকে কর্মহীন করলেও নতুন কর্মসংস্থানের দিকও উন্মোচন করবে। এজন্য আমাদের উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে দেশের উপযোগী কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি তৈরিতে জোর দিতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রসারে এই সম্মেলন নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। বিজ্ঞানী ও শিল্পখাতের বিশেষজ্ঞদের সমাবেশ সত্যিই প্রশংসনীয়। বিশ্ব এখন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যেখানে শিল্প বিপ্লবের নতুন প্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি ও টেকসই কৃষির জন্য অপরিহার্য। বাংলাদেশ কৃষি উৎপাদনে বিশ্বনেতৃত্বেও রয়েছে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার পাশাপাশি বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহেও ভূমিকা রাখছে।
তিনি আরো বলেন, উৎপাদন প্রযুক্তির উন্নয়ন ও যান্ত্রিকীকরণ খরচ কমিয়ে কৃষকদের লাভজনকতা নিশ্চিত করবে। কৃষি মন্ত্রণালয় চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি গ্রহণ ও কৃষি যান্ত্রিকীকরণ নীতিমালা বাস্তবায়নে কাজ করছে। স্মার্ট কৃষি, বিকল্প জ্বালানি ও ফসল পরবর্তী প্রযুক্তির প্রসারে গবেষণা ও শিল্পখাতের সংযোগ নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব অপরিহার্য। আমি আশ্বস্ত করছি, সম্মেলনের সুপারিশ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।
ওই সম্মেলনে ছয়টি টেকনিক্যাল সেশন, একটি ব্যবসায়িক সেশন এবং দুটি পোস্টার সেশনে মোট ১৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ ও প্লেনারি সেশনে মোট ৪টি বিষয় উপস্থাপন করা হবে। সম্মেলনে সেরা পোস্টার ও পেপারগুলোকে পুরস্কৃত করার পাশাপাশি সেগুলো জার্নাল অব অ্যাগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে (জেএএমবিই) প্রকাশ করা হবে।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলিপ্যাডে একটি কৃষি যন্ত্রপাতি মেলার আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে দেশের স্বনামধন্য আটটি প্রতিষ্ঠান (সরকারি ও বেসরকারি) তাদের কৃষিবিষয়ক যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তিগুলো প্রদর্শন করবে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগুলোও প্রদর্শন করা হয়
আরটিভি/এএএ