বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১২২ জন নেতাকর্মীকে শনাক্ত করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনা তদন্তে অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) ঢাবির উপাচার্য অফিস সংলগ্ন লাউঞ্জে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের হাতে তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেন জুলাই হামলা-সংক্রান্ত তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম সুপন।
তিনি বলেন, আমরা তদন্ত করার সময় বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজতে গেলে সেখানে কোনো হার্ডডিস্ক পাইনি। সব হার্ডডিস্ক সরিয়ে ফেলা হয়। আমরা সে ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছে একটা মেইল ও নম্বর পাঠাই। শিক্ষার্থীরা সেখানে জুলাই হামলার নানা ছবি, ভিডিও পাঠায়। এ ছাড়া আমরা ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল পত্র-পত্রিকার সংবাদগুলো দেখেছি, সেটার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চলাকালীন সময়ে ৭০ জন শিক্ষককে পাওয়া গেছে যারা শিক্ষার্থীদের জামায়াত-শিবির-ছাত্রদল-রাজাকার বলে ট্যাগিং করেন। যেটা আন্দোলনে প্রভাব ফেলেছে। কেননা শিক্ষক দ্বারা শিক্ষার্থীরা প্রভাবিত হবে সেটা স্বাভাবিক। এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে অনেকে শিকার করেছেন এবং সেটার জন্য সরি বলেছে। আমরা সেটা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছি।
মাহফুজুল ইসলাম সুপন বলেন, জুলাই আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত যত হামলা হয়েছে আমরা তার সবকিছু এ প্রতিবেদনে আনার চেষ্টা করেছি। সেখানে আমরা দেখেছি, ১৫ জুলাই নারী শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে, যেখানে ১২২ জন ঢাবি শিক্ষার্থী হামলায় জড়িত, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এ ছাড়া বহিরাগত ও অনেক শিক্ষার্থীর জড়িত থাকার প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। এ প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেট থেকে পাস হয়ে এলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আমরা তাদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জানাবো। এছাড়া যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের না তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে বলা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৫ জুলাই বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় আমরা দেখেছি, মল চত্বরে যারা হামলা করেছে তাদের মাথায় সাদা ক্যাপ পরা ছিল। এরপর যারা আহত হয়েছেন, তারা যখন ঢাকা মেডিক্যালে গিয়েছেন সেখানেও হামলা করে ছাত্রলীগ। এরপর চিকিৎসকদের বলা হয় চিকিৎসা না দিতে। সেখানে আমাদের প্রশাসনেরও যোগসাজশ থাকতে পারে, যা ছিল পূর্বপরিকল্পিত।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, ১৫ জুলাইয়ের ঘটনা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, জাতীয় জীবনে এর প্রতিফলন ঘটেছে। এ ঘটনার পরম্পরায় একটি গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস রচিত হয়েছে। তথ্যানুসন্ধান কমিটি কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এটা প্রায় ৫০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন। কাজটি করার সময় বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা তদারকি সময় আমরা বিভিন্ন সময় তদারকি করেছি। আমরা প্রাথমিকভাবে যা চিন্তা করেছি, তা থেকে এ কাজের পরিধি, ব্যাপ্তি ও পদ্ধতিগত জটিলতা অনেক বেশি ছিল।
তিনি বলেন, এটি পদ্ধতিগতভাবে সিন্ডিকেটের কাছে অর্পিত। ফলে এটি সিন্ডিকেটে উন্মোচিত হবে। সত্যানুসন্ধান কমিটি তদন্তের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করেছে। ফলে প্রতিবেদন তৈরি করতে তুলনামূলক সময় লেগেছে। আমাদের নানা সীমাবদ্ধতা আছে। আমাদের পুলিশের মতো ফরেনসিক বিভাগ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য দায়িত্ব পালনের সঙ্গে এটি একটি অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে করতে হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এটি সিন্ডিকেট সভায় উঠবে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এরপর তদন্ত কমিটি ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের মতো আইনি প্রক্রিয়াগুলো হবে। আমরা এটিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিন্ডিকেটে আলোচনা করব।
এ সময় উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) ড. সায়মা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমেদ, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেসানী, শামসুন নাহার হলের প্রাধ্যক্ষ নাসরিন সুলতানা ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদিয়া নেওয়াজ রিমি উপস্থিত ছিলেন।
আরটিভি/এফএ