বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের গুলশানের বাড়ির মালিকানা নিয়ে চলমান মামলার দুদক ও মওদুদের রিভিউ শুনানি শেষ হয়েছে।
আজ (বুধবার) শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ বেঞ্চ আসছে ৪ জুন রায়ের দিন ঠিক করেন।
আদালতে মওদুদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী, ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে। আদালত রায়ের জন্য আসছে ৪ জুন রোববার দিন রেখেছেন।
গেলো বছর ২ আগস্ট ২০১৬ রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়ি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ব্যারেস্টর মওদুদ আহমদের ভাই মঞ্জুর আহমেদের নামে মিউটেশন (নামজারি) করার জন্য দেয়া হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাজউকের করা আপিল মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে এই বাড়ি নিয়ে মওদুদ আহমেদের বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতির মামলাটিও বাতিল করে দেন আদালত।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানান, মিউটেশন সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বাতিল হওয়ায় বাড়িটি আর তাদের দখলে থাকছে না। মনজুর আহমদের নামে নামজারি করতে হাইকোর্টের দেয়া রায় বাতিলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) করা আপিল মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে দুদকের মামলাটির অভিযোগ আমলে নেয়া বৈধ বলে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুরের করা আপিল মঞ্জুর করায় মামলাটি বাতিল হয়ে গেছে।
এক আবেদনের শুনানি নিয়ে ২০১০ সালের ১২ আগস্ট ওই বাড়িটি মনজুর আহমদের নামে মিউটেশন করার জন্য হাইকোর্ট রায় দেয়। রাজউক এ রায়ের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি লিভ টু আপিল দায়ের করে। ২০১৪ সালের ৯ মার্চ আপিল বিভাগ রাজউককে আপিলের অনুমতি দেয়।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর বাড়িটি নিয়ে দুদকের উপ-পরিচালক হারুনুর রশীদ রাজধানীর গুলশান থানায় মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ জুন এ মামলায় অভিযোগ আমলে নেয় বিচারিক আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ হাইকোর্টে আবেদন করেন। ২০১৫ সালের ২৩ জুন দুর্নীতি মামলায় অভিযোগ আমলে নিয়ে বিশেষ জজ আদালতের আদেশ বৈধ বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। তিনি সাংবাদিকদের জানান, মওদুদ আহমদ ও তার ভাই মনজুর আহমদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাড়ি দখল ও আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিচারিক আদালত ২০১৪ সালের ১৪ জুন অভিযোগ আমলে নেয়। ওই অভিযোগ আমলে নেয়া সংক্রান্ত আদেশ বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন মওদুদ আহমেদ। আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আদালত রুল জারি করেছিল। রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে শুনানি শেষে রুল খারিজ করে রায় দেয় আদালত। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মওদুদ আহমদ।
উল্লেখ্য, গুলশান-২ এর ১৫৯ নম্বর প্লটের প্রকৃত মালিক ছিলেন পাকিস্তানি নাগরিক মো. এহসান। এক পর্যায়ে বাড়িটির মালিকানার কাগজপত্রে এহসানের স্ত্রীর নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা বাংলাদেশ ত্যাগ করলে ১৯৭২ সালে এটি পরিত্যক্ত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়। ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট মওদুদ আহমদ তার ইংল্যান্ডপ্রবাসী ভাই মনজুরের নামে একটি ভুয়া আমমোক্তারনামা তৈরি করে বাড়িটি সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ নেয়।
আর/জেএইচ