সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে আপিল বিভাগের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেয়ে প্রতিক্রিয়া জানাবে আওয়ামী লীগ। বললেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রয়াত সঙ্গীতজ্ঞ করুণাময় গোস্বামীর মরদেহে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
এ গুণী সঙ্গীতজ্ঞ ও শিক্ষাবিদের মরদেহে দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর বিষয়ে রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়ার পরই আমরা প্রতিক্রিয়া জানাব।
এ সময় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিকদের অপর এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, ড. করুণাময় গোস্বামী ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ ও সংস্কৃতির বটবৃক্ষ। তার চলে যাওয়া জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
পরে মন্ত্রী নগরীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন ৯নং সেক্টরের সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিনকে দেখতে যান।
মন্ত্রী জিয়া উদ্দিনের চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন এবং তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করেন।
সোমবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন বাতিল করে দেয়া হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রায় দেন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ২০১৪ সালে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানটি তুলে দিয়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী পাস হয়। এতে ৯৬ অনুচ্ছেদে পরিবর্তন এনে বিচারকের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে পুনরায় ফিরিয়ে দেয়া হয়, যা ১৯৭২ সালের সংবিধানেও ছিল।
গেলো ১ জুন ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানি শেষ হয়। ওই দিন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখেন।
এর আগে ৩০ মে দশম দিনের আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত প্রদান শেষ হয়। মোট ১০ জন অ্যামিকাস কিউরি আদালতে মতামত দিয়েছেন। যার মধ্যে ৯ জনই ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মতামত দেন।
এদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, আবদুল ওয়াদুদ ভুইয়া, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, এএফ হাসান আরিফ, এ জে মোহাম্মদ আলী ও এমআই ফারুকী ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে মত দেন। অ্যামিকাস কিউরি আজমালুল হোসেন কিউসি সংশোধনীর পক্ষে মত দেন। অপর দু’জন মত উপস্থাপন করেননি।
রায়ের পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আইন সভার কাছে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা রয়েছে। দেশের সংবিধানেও শুরুতে এই বিধান ছিল। তবে সেটি ইতিহাসের দুর্ঘটনা মাত্র। রায়ে আরো বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর ৬৩ শতাংশের অ্যাডহক ট্রাইব্যুনাল বা ডিসিপ্লিনারি কাউন্সিলরের মাধ্যমে বিচারপতি অপসারণের বিধান রয়েছে।
আদালত রায়ে আরো বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ৭০ অনুচ্ছেদের ফলে দলের বিরুদ্ধে সংসদ সদস্যরা ভোট দিতে পারেন না। তারা দলের হাইকমান্ডের কাছে জিম্মি। নিজস্ব কোনো সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা নেই। যদিও বিভিন্ন উন্নত দেশে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত দেয়ার ক্ষমতা আছে।
রায়ে আরো বলা হয়, মানুষের ধারণা হল- বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন হবে। সে ক্ষেত্রে বিচার বিভাগের প্রতি মানুষের আস্থা দুর্বল হয়ে যাবে। মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হব
এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি শেষে সর্বোচ্চ আদালত আজ হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রাখলেন।
সংবিধানে এই সংশোধনী হওয়ায় মৌল কাঠামোতে পরিবর্তন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করবে- এমন যুক্তিতে সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০১৪ সালের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করা হয়।
রিটের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল জারি করেন। গত বছরের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।
একই বছরের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
জেএইচ