একটা সময় বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল সিনেমা হল। বিনোদন বলতে বন্ধু-বান্ধব, পরিবার-পরিজন মিলে সিনেমা দেখা। বিশেষ করে, ঈদের সময়টাতে যেন উপচে পড়া ভিড় দেখা যেত সিনেমা হলগুলোতে। বলা যায়, টিকিট সংগ্রহ করার মধ্যেও ছিল রীতিমতো যুদ্ধ। সিনেমা হলগুলোর ভিড়ে যেন প্রকাশ পেতো দর্শকদের ঈদ আনন্দ।
সহজে টিকিট পাওয়া মানে ছিল সোনার হরিণ হাতে পাওয়া। তবে এসব চিত্র এখন কেবলই স্মৃতি! দর্শক সংকটের কারণে সারাদেশের মতো রাজবাড়ীর সিনেমা হলের সংখ্যাও প্রায় শূন্যের কোঠায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ৫টি উপজেলায় ২০টি সিনেমা হল ছিল। দর্শক সংকটে অধিকাংশ হল বন্ধ হয়ে গেছে। মাত্র ৩টি হল কচ্ছপের গতিতে চালাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। সেই হলগুলোও চলে দর্শকদের ওপর নির্ভর করে। দর্শক থাকলে চলে, না থাকলে বন্ধ থাকে।
জানা গেছে, সদর উপজেলায় ৬টি, বালিয়াকান্দি উপজেলায় ৬টি, পাংশা উপজেলায় ৪টি, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৩টি এবং কালুখালী উপজেলায় ১টিসহ মোট ২০টি সিনেমা হল ছিল।
এই ২০টি সিনেমা হলের মধ্যে রাজবাড়ী সদর উপজেলার সাধনা সিনেমা হল, কালুখালীর বৈশাখী এবং গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ঘাটের মনোরমাসহ মোট তিনটি সিনেমা হল এখন সচল রয়েছে। তা-ও সেসব চলছে কচ্ছপের গতিতে।
খুব একটা দর্শক না থাকায় মাসের বেশি ভাগ সময়ই বন্ধ থাকে এসব হল। দর্শক সংকটের কারণে যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে এই তিনটি হল! বাকি ১৭টি সিনেমা হলের ভবন ভেঙে গড়ে তোলা হয়েছে বিপণিবিতান, গ্যারেজ, গোডাউন ও আবাসিক ভবন। জেলার সবচেয়ে বড় সিনেমা হল ‘বসুন্ধরা’ মালিক পক্ষ বিক্রি করে দিয়েছেন।
সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্টরা দায়ী করছেন স্মার্ট ফোন, ইন্টারনেট, মানহীন সিনেমা ও বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনকে। তারা জানান, নব্বই দশক পর্যন্ত সিনেমা হলগুলোতে উপচে পড়া ভিড় থাকতো। ২০০০ সালের পর থেকে হলবিমুখ হতে শুরু করেন স্থানীয় দর্শকরা। তাদের ধারণা, পরিবারের সবাই মিলে দেখার মতো মানসম্মত ও শিক্ষণীয় সিনেমা তৈরি হলে দর্শকরা আবারও হলমুখী হবেন।
মনোরমা সিনেমা হলের মালিক তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, রাজবাড়ীতে অনেক সিনেমা হল ছিল। সবচেয়ে বেশি সিনেমা হল ছিল আমাদের। কিন্তু লোকসান গুনতে গুনতে একসময় সিনেমা হলগুলো বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছি।
সিনেমা হল বন্ধ করে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া বলেন, সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ আছে। এরমধ্যে মানসম্মত সিনেমা না থাকা, হলগুলো উন্নত না হওয়া, স্মার্ট ফোন, ফেসবুক, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন বিষয় এর জন্য দায়ী। তবে সরকার আন্তরিক হলে মালিকরা পুনরায় সিনেমা হলগুলো চালু করতে পারেন।
গোধূলী সিনেমা হলের ম্যানেজার আলমগীর হোসেন বলেন, একটা সময় ছিল, যখন মুক্তির পূর্বে নতুন সিনেমা বুক করতে হতো। এখন নতুন-পুরোনো কোনো সিনেমাই দর্শক দেখেন না। কারণ হিসেবে তিনি দায়ী করেন মুঠো ফোনকে। যখন যা ইচ্ছে তাই এই ডিভাইসে দেখতে পাচ্ছেন মানুষ। প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আলমগীর হোসেন বলেন, তাহলে কেন সময় নষ্ট করে বস্তাপচা বিনোদন নিতে হলে আসবেন দর্শক?