কেন এত জনপ্রিয় ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’ গানটি
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে খুশি। ঈদ আসলেই টিভি চ্যানেল থেকে শুরু করে সব জায়গায় নতুন নতুন কনটেন্ট দেখা যায়। তবে সবার প্রিয় এই উৎসবটি এলেই সবার কানে বাজতে থাকে ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’ গানটি। এটি শোনেননি, এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। ছোট থেকে বড় প্রায় সব বয়সের মানুষই গানটির সঙ্গে এখন পরিচিত। গানটির এত জনপ্রিয়তা থাকলেও এটি কেন জনপ্রিয় এবং এর শুরু কীভাবে―তা হয়তো অজানা অনেকের।
২০০৯ সাল, অর্থাৎ দীর্ঘ পনেরো বছর আগে বেসরকারি একটি মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনের জন্য গানটি লিখেন প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন কর্মকর্তা আনিকা মাহজাবিন। ২০১১ সালে অবশ্য প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে দেন তিনি। তবে ওই সময় তার লেখা গানটির সুর ও সংগীতায়োজন করেন তরুণ প্রজন্মের সংগীতশিল্পী হাবিব ওয়াহিদ এবং এতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সংগীতশিল্পী মিলন মাহমুদ।
‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি’ গানটি বিজ্ঞাপনচিত্রের থিম সং হলেও গান হিসেবে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে এটি। প্রকাশের প্রায় দেড় দশক হলেও এখনো এর কদর একদমই কমেনি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের আবেগের সঙ্গে মিশে গেছে গানটি। প্রতিবছরই ঈদযাত্রায় বাড়ি ফেরা মানুষের মুখে মুখে শোনা যায় গানটির কথা। আবার যেসব মানুষ জীবিকার প্রয়োজনে পরিবারের সদস্য ছেড়ে কর্মস্থলে ঈদ করেন, তাদেরও অনেক অনুভূতির মিশেল পাওয়া যায় গানটির কথায়।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে গানটি নিয়ে শ্রোতাদের উন্মাদনার ব্যাপারে এর গীতিকার আনিকা মাহজাবিন বলেন, আমাদের সময়ের কথা ভেবে খুবই ভালো লাগে। গানটির কথার সঙ্গে এর সুর ও কণ্ঠের জন্যও ভালোবেসে হৃদয়ে জায়গা দিয়েছেন মানুষ।
২০০৯ সালের ঘটনা। ঈদের খুব বেশি বাকি নেই তখন। ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে একটি বিজ্ঞাপনচিত্র করতে হবে। আনিকা মাহজাবিন অতীত মনে করে বলেন, খন্দকার আশরাফুল হক সরোজ বলেন, কিছু একটা করতে হবে। তখন লিখে ফেলি কথাগুলো ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি, আমার পথ দেব পাড়ি, কাছে যাব ফিরে বারবার’।
এরপর গানটি হাবিব ওয়াহিদ সুর করেন। তার ধানমন্ডির হোম স্টুডিওতে গানটির কথাগুলো পান সংগীতশিল্পী মিলন মাহমুদ। তিনি বলেন, গানটির সুর হওয়ার পর হাবিব নিজেই গাইছিল। আমি বললাম, তোমার কণ্ঠেই ভালো হচ্ছে। তখন হাবিব বলল, আপনি শুধু ভয়েসটা দিয়ে দেখেন, তারপর দেখেন কী ঘটে। ভয়েস দেয়ার পর তো অনুভূতিই পাল্টে গেল। এরপর গ্রামীণফোনের কাছে পছন্দ হয় গানটি। যা দিয়ে পরবর্তীতে বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণ করেন কিসলু গোলাম হায়দার। এরপর গানটির ভিডিওচিত্র তৈরি করেন রম্য খান। যা বিভিন্ন রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও টেলিভিশনে দেখানো হয়েছিল।
‘স্বপ্ন বাড়ি যাবে’ প্রকাশের পর ব্যাপক সাড়া ফেললে এর সাত বছর পর ২০১৬ সালে ‘স্বপ্ন বাড়ি যাবে-২’ তৈরি করা হয়। এটিও বিজ্ঞাপনের থিম সং ছিল। যার সুর ও সংগীতায়োজন করেন হাবিব ওয়াহিদ। রাসেল মাহমুদের লেখায় গানটিতে কণ্ঠ দেন সংগীতশিল্পী মিথুন চক্র।
এটিও প্রকাশের পর ব্যাপক সাড়া ফেলে। কিন্তু অনেকেই হয়তো জানেন, ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি ২’ গানটি হাবিব ওয়াহিদের বা মিলন মাহমুদের। আসলে তা নয়, এটি গেয়েছেন মিঠুন চক্র। দুটি গানের শিরোনাম একই হলেও কথা একদমই আলাদা। এর গীতিকারও আলাদা। কিন্তু দুটি গানেরই সুরে কিছুটা মিল থাকায় দ্বিধায় পড়তে হয় দর্শক-শ্রোতাদের। আর ২০২২ সাল থেকে ‘স্বপ্ন যাবে বাড়ি ২’ গান নিয়েই নিয়মিত বিজ্ঞাপনচিত্র করছে মুঠোফোন প্রতিষ্ঠানটি।
মন্তব্য করুন